Homeআন্তর্জাতিকবিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তনে চীন-রাশিয়াকে দায়ী করে যা বললেন ব্লিঙ্কেন

বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তনে চীন-রাশিয়াকে দায়ী করে যা বললেন ব্লিঙ্কেন

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, রাশিয়া ও চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কারণে শীতল যুদ্ধ-পরবর্তী পুরনো বিশ্বব্যবস্থা শেষ হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বিশ্ব নতুন এক কূটনৈতিক ব্যবস্থায় প্রবেশ করছে।

তিনি আরও বলেছেন, নতুন এই ব্যবস্থায় চীন ও রাশিয়া ক্রমেই হুমকি হয়ে উঠছে। এই হুমকি মোকাবিলা করে পুরনো বিশ্বব্যবস্থার মতো নতুন এই বিশ্বব্যবস্থাতেও যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দিতে হবে।

বুধবার ওয়াশিংটনের জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটিতে বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘এক যুগ শেষ হয়ে যাচ্ছে। নতুন এক যুগের শুরু হচ্ছে। এখন আমরা যে সিদ্ধান্ত নেব সেই অনুযায়ীই আগামী দশকগুলোতে আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ে উঠবে।’

পুরনো বিশ্বব্যবস্থা কি তার ব্যাখ্যা দিয়ে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘শীতল যুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা শেষ হয়েছে। একই সঙ্গে কয়েক দশকের আপেক্ষিক ভূরাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জায়গায় কর্তৃত্ববাদী শক্তি জোরদার হয়ে উঠছে।’ এরপর মার্কিন এই কূটনীতিক বলেন, ওই সব শক্তির নেতৃত্ব দিচ্ছে রাশিয়া ও চীন।

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানকে ‘আগ্রাসন’ অভিহিত করে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার এই আগ্রাসন বিশ্ব ব্যবস্থার জন্য সবশেষ ও সবচেয়ে মারাত্মক হুমকি।’

তার দাবি, চীন বিশ্বব্যবস্থার জন্য সবচেয়ে বড় ও দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশটি বিশ্বব্যবস্থা নতুন করে গড়তে চায়। সে লক্ষ্যে এরই মধ্যে অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, সামরিক ও প্রযুক্তিগত শক্তির বিকাশ ঘটাচ্ছে দেশটি।

ব্লিঙ্কেন আরও বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে ‘সীমাহীন’ অংশীদারত্বের মাধ্যমে বিশ্বকে একনায়কতন্ত্রের জন্য নিরাপদ করতে একসঙ্গে কাজ করছে বেইজিং ও মস্কো।’ তিনি দাবি করেন, রাশিয়া ও চীন বিদ্যমান বিদ্যমান বিশ্ব ব্যবস্থাকে ‘পশ্চিমাদের আরোপ করা’ ব্যবস্থা হিসেবে অভিহিত করেছে। যদিও এই ব্যবস্থা সার্বজনীন মূল্যবোধ ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে।

ব্লিঙ্কেন মনে করেন, চীন ও রাশিয়া পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থা বদলানোর চেষ্টা করলেও বিশ্ববাসী তা রুখে দেবে। তিনি বলেন, ‘বেইজিং ও মস্কো যখন বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার স্তম্ভগুলোকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে; যখন তার এমন মিথ্যা দাবি করছে যে, এই ব্যবস্থা কেবলমাত্র পশ্চিমের স্বার্থকে এগিয়ে নিচ্ছে, তখন বিশ্ববাসী নিশ্চিতভাবে এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বলবে, ‘না, আপনারা যে ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন, তা আমাদের ব্যবস্থা। এটা আমাদেরই স্বার্থ রক্ষা করছে।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের তার স্বাভাবিক ‘নিরাহঙ্কার’ অবস্থানের কারণেই ‘নিজের শক্তির জায়গা থেকে’ নেতৃত্ব দিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, এক্ষেত্রে আমাদেরকে অনেক দেশের ও মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। যেসব দেশ ও মানুষকে দেয়া অনেক প্রতিশ্রুতিই পুরনো বিশ্ব ব্যবস্থা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।’

ব্লিঙ্কেন বলেন, মিত্ররাই ওয়াশিংটনের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হবে। তিনি দাবি করেন, কয়েক বছর আগেও ‘ন্যাটোর সক্ষমতা ও প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন উঠলেও মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই পশ্চিমা এই সামরিক জোট আগের চেয়ে আরও বড়, শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠেছে।’

ব্লিঙ্কেন আরও বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট প্রমাণ করেছে, ‘কোনো জায়গায় আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ওপর আক্রমণ হলে তা বিশ্বের সর্বত্র মানুষের ক্ষতি করে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের জয় নিশ্চিত করা এবং সংঘাত থেকে বের করে এনে একটি স্বতঃস্ফূর্ত ও সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।’

Exit mobile version