সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন অভিযোগ করে পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিন বলেছেন, একটি ছবি ছড়িয়ে দিয়ে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এডিসি হারুন অর রশিদের সঙ্গে তার বিয়ের কল্পকাহিনী প্রচার করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) সাংবাদমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।
সানজিদা আফরিন বলেন,
যে কেউ ভালোভাবে খেয়াল করলেই বুঝবে- ওই ছবির নারী আমি নই। এর আগে অনেক ইস্যুতে অনেকেই বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন। এবার আমি এর শিকার।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে নোংরা মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন,
হারুন স্যারের সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই। তিনি শুধুমাত্র আমার কলিগ। তিনি আমাকে ডাক্তারের সিরিয়ালের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এছাড়া হাসপাতালে কী ঘটেছে সে ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে পুরো বিষয় বেরিয়ে আসবে।
পুলিশের সাময়িক বরখাস্ত এডিসি হারুন অর রশিদ, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে মারধর এবং রাষ্ট্রপতির এপিএস নিজের স্বামী আজিজুল হক মামুনের মধ্যকার ঘটনার বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে বর্ণনা দেন সানজিদা আফরিন।
সানজিদা বলেন, আমার স্বামীসহ আরও কয়েকজন প্রথমে এডিসি হারুন স্যারকে মারধর করেন।
সানজিদার দাবি,
অনেকদিন ধরে আমার কিছু শারীরিক সমস্যা ছিল। আমি স্যারকে কল দিয়েছিলাম আমার জন্য একজন চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ম্যানেজ করে দেয়ার জন্য। স্যার ওসি শাহবাগ এবং ওসি রমনা থানাকে দিয়ে ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬টার সময় একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট ম্যানেজ করে দেন। পরে আমি ডাক্তার দেখাতে যাই। ৬টার সময় হাসপাতালে যাওয়ার পর জানতে পারি যার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়া হয়েছে সেই চিকিৎসক মিটিংয়ে আছেন। এ অবস্থায় আমি আবারও স্যারকে কল দিয়ে জানাই ওই চিকিৎসক হয়তো আমাকে দেখবেন না। তখন স্যার বলেন ‘তুমি অপেক্ষা করো আমি দেখি এসে কথা বলে কাউকে ম্যানেজ করা যায় কি না।’ এরপর উনি হাসপাতালে আসেন। উনি আসার পর হাসপাতালে কথা বলেন। এতে একজন চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ম্যানেজ হয়।
সানজিদা আরও বলেন, ‘‘ডাক্তার আমাকে কিছু টেস্ট দেন। আমি সেগুলোর জন্য স্যাম্পল দিচ্ছি। যখন এ ঘটনা ঘটে তখন আমি ইটিটি রুমে ছিলাম। ইটিটি রুম থেকে আমি প্রথম যে শব্দ শুনতে পাই, স্যার খুব জোরে বলছেন যে, ‘ভাই আপনি আমার গায়ে কেন হাত দিচ্ছেন। আপনিতো আমার গায়ে হাত দিতে পারেন না’।’’
‘আমি প্রথমে বিষয়টি বুঝতে পারিনি। আমার মনে হয়েছিল যে, অন্য কারও সঙ্গে কোনো ঝামেলা হয়েছে বা এরকম কিছু। পরে আমি আমার হাজব্যান্ডের গলার আওয়াজও শুনতে পাই। তখন আমার হাজব্যান্ডসহ কয়েকজন ছেলে যাদেরকে আমি চিনতাম না তারা স্যারকে মেরে টেনেহিঁচড়ে রুমের ভেতরে নিয়ে আসেন।’
সানজিদার ভাষ্য,
ওই সময় আমার হাজব্যান্ড খুব উত্তেজিত ছিলেন। আমি জানি না যে কি হয়েছিল। আমার হাজব্যান্ড সঙ্গের ছেলেদেরকে বললেন, পুরো জিনিসটা ভিডিও করার জন্য। আমি তখন ইটিটি রুমে ছিলাম। আমার সারা শরীরে বিভিন্ন মেশিন লাগানো ছিল। আমি নিজেও টেস্ট করানোর জন্য হাসপাতালের দেয়া কাপড় পরা ছিলাম। তখন আমি আমার হাজব্যান্ডকে বললাম, ‘রুমের ভেতরে আপনি বাইরের লোকজন নিয়ে কেন আসছেন। ওদেরকে চলে যেতে বলেন। আর আপনি কেন ভিডিও করছেন’।
এ সময় তার স্বামী মামুন তাকেও মারধর করেছেন অভিযোগ তুলে সানজিদা বলেন, ‘‘আমি যখন ভিডিও না করার জন্য চিৎকার করে বলছিলাম, তখন আমার হাজব্যান্ড আমার গায়েও হাত তুলেন। এ সময় তারা স্যারকেও মারধর করেন। তখন আমি তাদের কাছ থেকে ক্যামেরাটা নিয়ে নিয়েছিলাম। বলেছিলাম যে, ‘আপনারা এই অবস্থায় ভিডিও করতে পারেন না।’ তখন ছেলেগুলো ক্যামেরা ছিনিয়ে নিতে আমার সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে। এরমধ্যে রুমে হাসপাতালের সিকিউরিটিরা চলে আসে। আর কিছুক্ষণ পর, প্রায় ১০-১৫ মিনিট পর থানার ফোর্স এসে তাদেরকে নিয়ে যায়।’’
৯ সেপ্টেম্বর রাতে শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে। এর জেরে ওইদিন রাতেই শাহবাগ থানার সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভিড় করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও পুলিশের কর্মকর্তারা থানায় গিয়ে মধ্যরাতে মীমাংসা করেন। তবে ঘটনাটি আলোচনার জন্ম দেয়।
এ ঘটনায় ১০ সেপ্টেম্বর দুপুরে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এডিসি হারুনকে রমনা বিভাগ থেকে সরিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) দাঙ্গা দমন বা পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। একই দিন সন্ধ্যায় তাকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয় বলেও জানানো হয়। পরের দিন ১১ সেপ্টেম্বর বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এডিসি হারুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সবশেষ তাকে পুলিশের রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত থাকা অবস্থায় বিধি অনুযায়ী তিনি খোরপোষ ভাতা পাবেন।