লিবিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় ‘ডানিয়েল’ আঘাত হেনেছে। এতে ভূমধ্যসাগর তীরের শহর দেরনাসহ বেশ কয়েকটি শহর লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। ঝড়ের সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা।
এতে ওই অঞ্চলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি অন্তত দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আরও অন্তত দুই হাজার মানুষ নিখোঁজ হয়েছে। তাদের সবাই মারা গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মূলত গত রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) আফ্রিকার দেশটির পূর্ব উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়টি। শক্তিশালী বাতাস ও প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতের কারণে বেনগাজি, তবরুক, তৌকরা, আলমার্জ, তাকনেস, আলওয়াইলিয়া, বায়াদা, বালবায়াদা, শাহহাত, সুসা ও দেরনার মতো শহরগুলোতে ব্যাপক বন্যা দেখা দেয়।
ঝড়ে শহরগুলোর বহু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে বন্যায় অনেক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দেরনা শহরের দুটি পুরনো বাঁধ ভেঙে গেছে। ফলে শহরটি দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ‘পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে’ বলে জানা গেছে।
রেড ক্রিসেন্টের বলেছে, এরই মধ্যে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পূর্ব লিবিয়াভিত্তিক স্বঘোষিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ওসামা হামাদ জানিয়েছেন, অন্তত ২ হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। তাদের সবার মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে আহমেদ আল-মোসমারি নামে পূর্বাঞ্চলভিত্তিক সশস্ত্র বাহিনীর এক মুখপাত্র বলছেন, শুধুমাত্র দেরনাতেই মৃত্যু ২ হাজার ছাড়িয়েছে। ৫ থেকে ৬ হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। দেরনার দুটি বাঁধ ভেঙে এত মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করছেন আল-মোসমারি। তার মতে, ওই বাঁধ ভেঙে পড়ার কারণেই ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ কারফিউ তথা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। শিক্ষা ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে চলছে উদ্ধার অভিযান। উদ্ধার অভিযানে সেনা সদস্যদেরও নামানো হয়েছে। অভিযান চালাতে গিয়ে ৭ জন সেনা নিখোঁজ হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
আল জাজিরা জানিয়েছে, দেরনা শহরটি পাহাড়ে ঘেরা। এখানকার দুটি বাঁধ ভেঙে গেছে। কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, ৩ কোটি ঘন বর্গমিটার পানি বাঁধ ভেঙে শহরে প্রবেশ করেছে।
দেরনা শহরের এক বাসিন্দা আহমেদ মোহাম্মদ সোমবার বলেন, ‘আমরা ঘুমে ছিলাম। যখন ঘুম ভাঙে তখন বাড়িতে পানি দেখতে পাই। আমরা ভেতরে আছি, বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করছি।’
লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর বায়দাতে অন্তত ১২ জনের প্রাণহানির কথা জানিয়েছে স্থানীয় চিকিৎসাকেন্দ্র। উপকূলীয় শহর সুসাতে আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া শাহহাত ও ওমর আল-মোখতার শহরেও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।
সিএনএনের প্রতিবেদন মতে, গত সপ্তাহে ভূমধ্যসাগরে উৎপত্তি হয় ঘূর্ণিঝড় ‘ডানিয়েলে’র। এরপর এটি গ্রিসের দিকে এগোতে থাকে। বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) গ্রিসের কিছু এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়। তবে এর দুদিন আগে থেকেই দেশটিতে আবহাওয়া চরম রূপ নেয়।
এর ফলে গ্রিস ছাড়াও, তুরস্ক ও বুলগেরিয়ায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গত কয়েকদিন যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, তা কয়েক মাসের সমান। ফলে দক্ষিণ ইউরোপের এই তিন দেশে ব্যাপক বন্যা ও ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। এতে এক ডজনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এরপর ঘুরতে ঘুরতে এটি চলতি সপ্তাহে লিবিয়ায় আঘাত হানে।