Homeসর্বশেষ সংবাদরাজা রাম মন্দিরকে ঘিরে বাড়ছে দর্শনার্থী, সংস্কারের দাবি

রাজা রাম মন্দিরকে ঘিরে বাড়ছে দর্শনার্থী, সংস্কারের দাবি

মাদারীপুরের রাজৈরে প্রাচীন ভাস্কর্য শিল্পের অনুপম নিদর্শন খালিয়া রাজা রাম মন্দির। এটিই জেলার একমাত্র প্রাচীন মন্দির। রাজা রাম রায় চৌধুরীর বসতভিটা ও মন্দির পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে সময় কাটানোর উপযুক্ত জায়গা। মন্দিরটি জেলা শহর থেকে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার দূরে খালিয়া এলাকায়। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট হয়ে আসা যায় সহজে। এটি দেখতে প্রতিদিনই বাড়ছে দর্শনার্থীর সংখ্যা।

এলাকা ঘুরে জানা যায়, ২৩ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত রাজা রাম মন্দিরটি। ২০ ফুট দৈর্ঘ্য, ১৬ ফুট প্রস্থ ও ৪৭ ফুট উচ্চতার মন্দিরটি দেখতে অনেকটাই চৌচালা ঘরের মতো। মন্দিরজুড়ে টেরাকোটায় রামায়ণ ও মহাভারতের বিভিন্ন দৃশ্যাবলী ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নিপুণ হাতে। রয়েছে বিভিন্ন দেব-দেবী, পশু-পাখি ও লতা-পাতার অসংখ্য চিত্র।

দক্ষ শিল্পীর কারুকাজসমৃদ্ধ এ মন্দির শত শত বছর পরও মন কাড়ে মানুষের। জমিদার আমলে এখানে গড়ে তোলা মন্দিরটি আজও কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে। জেলার সবচে পুরনো এ মন্দিরটি দেখতে ছুটে আসেন দূরদূরান্তের দর্শনার্থীরা। বড় সড়ক থেকে মাত্র ৫০০ ফুট পাকা রাস্তা হলে বাড়তো আরো পর্যটক – এমনটাই স্থানীয়দের মত।

বহু বছর আগে রামের বাবা-মা ছিলেন অত্যন্ত দরিদ্র। তারা দুজনই উজানী রাজার বাড়িতে দাস-দাসি হিসেবে কাজ করতেন। রাম তখন খুবই ছোট। উজানী রাজার বাড়ির বারান্দায় রামকে রেখে মা-বাবা বাইরে কাজে যেতেন। প্রবাদ আছে, রোদ-বৃষ্টিতে ফনিমনসা এসে রামকে ছায়া দিয়ে রাখত। একদিন উজানী রাজা দেখেন, রোদের মধ্যে ফনিমনসা শিশু রামকে ছায়া দিচ্ছে। বিষয়টি দেখে রাজা উজানী ও রানী রামের মা-বাবাকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দেন। আর দান করেন জমিদারি। তারপর বড় হয়ে রাম রাজা হয়ে ধরে রাখেন রাজত্বও।

বর্ষা সাহা নামে মন্দিরটিতে ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, প্রাচীনকালে নির্মিত এতো সুন্দর মন্দির এর আগে কখনও দেখেননি তিনি। এটি যদি নতুন করে সংস্কার করা হয়, তাহলে এর সৌন্দর্য আরো ফুটে উঠবে।

আরেক দর্শনার্থী ইসরাত জাহান লিপি বলেন, বান্ধবীর সাথে এখানে ঘুরতে এসেছেন। এখানে এসে অনেক ইতিহাস জানলাম। মন্দিরের সামনে বিভিন্ন কারুকার্য দেখে মুগ্ধ হয়েছি। এমন কারুকার্য এখনকার নতুন কোনো ভবনে চোখে পড়ে না।

রিফাত হোসেন সুজন নামে এক পর্যটক বলেন, খালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনের পাকা সড়ক থেকে কাদা-পানির রাস্তায় পায়ে হেঁটে আসতে হয় মন্দিরটির প্রাঙ্গণে। মাত্র পাঁচশ ফুটের একটি পাকা সড়ক হলে মন্দিরটিতে যাতায়াতে দর্শনার্থীরা সুবিধা পাবে। সড়কটি হওয়া জরুরি।

বৃহত্তর ফদিরপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য পরিষদের সদস্য সুবল বিশ্বাস জানান, দেশ ভাগের সময় রাজা রামের পরিবারের লোকজন অন্যত্র চলে যান। বংশীয় পরিচয় হিসেবে শুধু আছে মন্দির ও বসতভিটা। এরই মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বসতভিটা ভেঙেচুরে হারিয়ে যেতে বসেছে। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পুরনো মন্দিরটির রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার জরুরি। আর মন্দিরটি টিকিয়ে না রাখা হলে জেলার ইতিহাস ও ঐহিত্য বিলুপ্ত হতে পারে বলে মত বিশিষ্টজনদের।

সংস্কৃত মন্ত্রণালয় থেকে মন্দিরটি দেখভাল করতে একজন সাইড পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা সুশীল বোস জানান, সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত হয় প্রাচীন ভাস্কর্য শিল্পের অনুপম নিদর্শন খালিয়া র রাজা রাম রায় চৌধুরী মন্দির। এটি দীর্ঘদিনের পুরনো মন্দির হওয়ায় সংস্কার করা প্রয়োজন। আর তাহলেই কেবল আরো দর্শনার্থী আসবে এবং জেলার ইতিহাস সম্পর্কে আরও ধারণা পাবে।

সর্বশেষ খবর