সার্জিও রামোসের ভবিষ্যৎ নিয়ে কানাঘুষা চলছিল বেশ কিছুদিন। ফ্রি এজেন্ট হিসেবে পিএসজি ছাড়ার পর গ্রীষ্মকালীন দলবদলের সময় শেষ হয়ে গেলেও কোনো দলে তখন পর্যন্ত যোগ দেওয়ার খবর শোনা যাচ্ছিল না। তবে তার হাতে তুরস্কের দুটি ক্লাব, সৌদি ক্লাব আল ইত্তিহাদ ও এমএলএসের প্রস্তাব রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য এর কোনটিতেই যোগ দেননি তিনি।
দীর্ঘ ১৮ বছর আগে ১৯ বছর বয়সী এক তরুণ রামন সানচেজ পিজুয়ান স্টেডিয়াম ছেড়ে গিয়েছিলেন। ইউরোপের শীর্ষ প্রতিভাদের একজন হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন শ্রেষ্ঠতম ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে। এরপর সময়ের সঙ্গে সেই তরুণ নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা হিসেবে। ফুটবলের সকল যুগের সেরা ডিফেন্ডারদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকবে তার নাম। বলা হচ্ছে সার্জিও রামোসের নাম। স্প্যানিশ ফুটবলের এই কিংবদন্তি অবশেষে ফিরলেন নিজ ঘরে। ১৮ বছর আগে যেখান থেকে তার বিশ্বজয়ের শুরু, সেই সেভিয়ায় ফিরেছেন তিনি।
৩৭ বছর বয়সী রামোস চাইলে গ্যালতাসারেই, বেসিকতাস, পোর্তো, এমএলএসেও যেতে পারতেন। সৌদি লিগের ক্লাব আল ইত্তিহাদ তো তাকে দিয়েছিল দারুণ লোভনীয় প্রস্তাব। করিম বেনজেমাকে দলে ভেড়ানো ক্লাবটিতে যোগ দিলে রামোস বছরে বেতন পেতেন ২ কোটি ইউরো বা ২৩৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। কিন্তু তিনি বেছে নিয়েছেন শৈশবের ক্লাবকে। আর্থিক সংকটে থাকা ইউরোপা লিগ চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে গতকাল সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর করে রামোস বলেন, ‘এটা আমার বাবা, দাদা ও আন্তনি পুয়ের্তোর জন্য (মাঠেই জীবন হারানো সেভিয়ার সাবেক অধিনায়ক ও রামোসের সতীর্থ)।
ঘরের ছেলে ঘরে ফেরায় খুশি সেভিয়াও। এক বিবৃতিতে ক্লাবটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘সার্জিও ৭ বছর বয়সে আমাদের বয়সভিত্তিক প্রকল্পে যোগ দিয়েছিলেন। ২০০২-০৩ সালে মূল দলে অভিষেকের আগে তিনি বয়সভিত্তিক দলগুলোও পেরিয়ে এসেছেন। ১৯ বছর বয়সে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিতে ক্লাব ছেড়ে যাওয়ার প্রায় দুই দশক পর আমাদের একাডেমির সেন্টারব্যাক ঘরে ফিরলেন।’
দলবদলের খবরাখবরের বির্ভরযোগ্য উটর ফ্যাব্রিজিও রোমানো জানিয়েছেন, ‘সেভিয়া রামোসকে বছরে ১০ লাখ ইউরো বা বাংলাদেশি টাকায় ১১ কোটি ৮৭ লাখ টাকার কিছু বেশি পারিশ্রমিক হিসেবে দেবে। আপাতত এক বছরের জন্য চুক্তি করলেও পরবর্তীতে আরও এক বছরের জন্য চুক্তির সুযোগ থাকছে। এই চুক্তি স্বাক্ষরের পর রামোস সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এটি বিশেষ দিন কারণ ঘরে ফেরা সবসময়ই আনন্দের।’
সেভিলের কামাস শহরে জন্ম নেওয়া রামোসের ফুটবলে হাতেখড়ি সেভিয়ার একাডেমিতেই। বয়সভিত্তিক দলে তার সঙ্গে ছিলেন হেসুস নাভাস ও আন্তনি পুয়ের্তো। ২০০৭ সালে মাঠেই হার্টঅ্যাটাক করে মারা যান পুয়ের্তো। তার মৃত্যুতে দারুণ আঘাত পান রামোস। এরপর নানা সময়ে সাফল্যের দিনে স্মরণ করেছেন বাল্যবন্ধুকে। ২০০৮ সালে ইউরো ও ২০১০ সালে স্পেনকে প্রথমবার বিশ্বকাপ শিরোপা জেতানোর মুহূর্তেও পুয়ের্তোকে স্মরণ করেছিলেন রামোস। শৈশবের ক্লাবে ফেরার দিনেও স্মরণ করেছেন প্রয়াত বন্ধুকে।