জামালপুরের বকশীগঞ্জে তিনটি ইউনিয়নের ১০টি গ্রামে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বসত ভিটাসহ ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বার বার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে হাজারো মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, বকশীগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন সাধুরপাড়া, মেরুরচর ও নিলাখিয়া ইউনিয়নের বুক চিরে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ ও দশানী নদী। সেই নদ ও নদী বরাবরের মতোই চিরচেনা রূপে ফিরেছে। উপজেলার ১০টি গ্রামে নদ-নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙনের কারণে অনেক পরিবার এখন নিঃস্ব। সম্প্রতি বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদী ভাঙনের তীব্রতাও বেড়েছে।
সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বাঙাল পাড়া, আইরমারী খান পাড়া, চর আইরমারী, চর কামালের বার্ত্তী, মেরুরচর ইউনিয়নের বাঘাডুবি, ভাটি কলকিহারা ,আউল পাড়া , সেকেরচর, নিলাখিয়া ইউনিয়নে দক্ষিণ কুশল নগর ও সাজিমারা গ্রামে নদী ভাঙন চলমান রয়েছে। নদী ভাঙনে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারের বসত ভিটা নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। শুধু বসতভিটাই নয়, ফসলি জমিও বিলীন হচ্ছে।
প্রতি বছর বন্যা এলেই প্রকৃতির নিষ্ঠুরতা শুরু হয় নদী ভাঙা মানুষের ওপর। নদী ভাঙনের ফলে বসত ভিটা, ফসলি জমি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে পরিবার গুলোকে। নদী ভাঙন রোধে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন কার্যকর উদ্যোগ না থাকার কারণে ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না।
এসব পরিবার বার বার নদী ভাঙনের শিকার হওয়ায় আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন। একারণে সামাজিক মর্যাদাও হারিয়েছেন তারা।
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিলাখিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কুশল নগর গ্রামে নদী ভাঙনের খবর নিতে গেলে দেখা যায়, দশানী নদীর ভাঙন শুরু হওয়ায় একটি কাঠের বাগান কেটে ফেলছেন জমির মালিক জিয়াউর রহমান।
তিনি জানান, জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড আমাদের গ্রামে ভাঙন রোধে ২০০ মিটার পর্যন্ত জিও ব্যাগ ফেলেছে। কিন্তু নদীর পানির তীব্র স্রোতে ও ভাঙনে ২০ মিটার পর্যন্ত স্থাপিত জিও ব্যাগ পানিতে ভেসে গেছে। পাশাপাশি ২০০ মিটারের বাইরেও নতুন করে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিনি দক্ষিণ কুশল নগর গ্রামকে বাঁচাতে আরও ২০০ মিটার জিও ব্যাগ ফেলার দাবি জানান।
সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বাঙাল পাড়া ও আইরমারী খান পাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি বছরের মত এবারও তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই দুটি গ্রামের অন্তত ২০ টি পরিবার দশানী নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছেন।
বাঙাল পাড়া গ্রামের কৃষক মিষ্টার আলী জানান, তাদের পরিবারের সবাই এখন নদী ভাঙনে নিঃস্ব। এই পরিবারের কমপক্ষে ছয়জন বসতভিটা হারিয়ে ঢাকায় জীবিকা নির্বাহ করছেন।
তিনি জানান, নদী ভাঙন রোধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা না থাকায় বাপ দাদার ভিটা নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। তাই ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মেরুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক জানান, তার ইউনিয়নের চারটি গ্রামে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রতি বছরই মানুষ বসত ভিটা ও ফসলি হারাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে নদী ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে মানচিত্র থেকে গ্রামগুলো বিলীন হতে পারে। তাই স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, নদী ভাঙন রোধে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিরক্ষা কাজের জন্য সিসি ব্লকের একটি প্রকল্প সাবমিট করা হবে। আশাকরি প্রকল্পটি পাশ হলে নদী ভাঙন রোধকল্পে স্থায়ী সমাধান হবে।
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অহনা জিন্নাত জানান, যেসব পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
