চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদন হলেও বগুড়ার বাজারে মাছ সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আর সেকারণেই বর্তমানে মাছ বাজারের আগুনে পুড়ছেন ক্রেতারা। অস্থির বাজারে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না মাছের দাম। সপ্তাহ ব্যবধানে খুচরা বাজারে রুই মাছ কেজিতে ৬০০ ও পাঙাশ ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বগুড়া জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য বলছে, জেলায় বছরে মাছের উৎপাদন প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন। বগুড়ার ৩৭ লাখ মানুষের ৮১ হাজার ৭৮১ মেট্রিক টনের বার্ষিক চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত থাকে প্রায় ১৯ হাজার মেট্রিকটন। অথচ বেশি উৎপাদন হলেও মাছ বাজারে আগুন লেগেছে।
সরেজমিনে শহরের চারমাথা মাছের আড়তে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি রুই আকার ভেদে বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা থেকে ৫২০ টাকায়। খুচরা বাজারে যা বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজিতে। পাইকারিতে কাতলার কেজি ৪৫০ টাকা। আড়তে গরীবের ইলিশ খ্যাত সিলভার কার্প আর পাঙাশের কেজিও ছাড়িয়েছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকা। পাবদা ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা, টেংরা ৬২০ টাকা আর বাটা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। স্বাভাবিক সময়ে খুচরা বাজারে যে দাম থাকে এখন পাইকারি বাজারেই তার চেয়ে বেশি দাম।
অস্বাভাবিক এই দামে ভোক্তাদের মতোই নাভিশ্বাস পাইকাররা। পুঁজির অভাবে মাছ না কিনেই ফিরছেন অনেকে।
বগুড়া উপশহর বাজারের মাছ ব্যবসায়ী হোসেন আলী বলেন, ‘দুই কেজির একটা রুই মাছ কেনা লাগে হাজার টাকায়। আনুষঙ্গিক খরচ ধরে এই মাছে লাভ করতে হলে কমপক্ষে ১১০০ টাকা বিক্রি করতে হবে। ক্রেতা দামাদামি করে এ জন্য আরেকটু বেশি চাই। এখন একটা মাছ ১২০০ টাকা দাম শুনলেই তো ক্রেতা ক্ষেপে যান।’
আরেক ব্যবসায়ী সিরাজ বলেন, ‘আমার অল্প টাকার ব্যবসা ভাই। যেই টাকা দিয়ে আগে আড়াই মণ মাছ কিনেছি; এখন সেই টাকায় দুই মণ মাছও হচ্ছে না। এমন দাম বেড়েছে যে, অনেকে আমরা মাছ না কিনেই ফিরে যাচ্ছি। কারণ এতো দাম দিয়ে কিনে বিক্রি করতে না পারলে পুরো টাকাই লস যাবে।’
এ বছর প্রজনন মৌসুমে বৃষ্টিপাত পর্যাপ্ত ছিল না। তাই প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। যার প্রভাবে বাড়তি চাপ পড়েছে পুকুরের মাছে বলে জানান রূপালি মৎস্য আড়তের ম্যানেজার হাসান আহমেদ মহির।
তিনি বলেন, ‘নদী নালার মাছ তুলনামূলক অনেক কম আমদানি হচ্ছে। এ জন্য পুকুরের মাছের চাপ বেশি। দাম এতো বেশি হওয়াটা সাধারণ মানুষের জন্য কষ্টকর। তবে সবকিছুতেই খরচ বেড়েছে। ১৪০০/১৫০০ টাকার এক বস্তা মাছের খাবার এখন ২৫০০ টাকা।’
বগুড়ার চারমাথা আড়তে বর্তমানে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ মেট্রিক টন মাছ কেনাবেচা হয়। তবে সরবরাহ স্বাভাবিক হলে প্রতিদিন ১৫ মেট্রিক টনের বেশি মাছ আমদানি হয় এই আড়তে। তবে দামেও কিছুটা স্বস্তির খবর প্রত্যাশা করছেন ব্যবসায়ীরা।