নতুন সিল্ক রোডের গেটওয়ে হতে চলেছে চীনের পশ্চিমের প্রদেশ শিনজিয়াং। প্রাচীন পথটিকে পুনরুদ্ধারে উরুমচী শহরে চালু হয়েছে আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর।
মধ্য এশিয়া হয়ে ইউরোপে চীনের রেশম বয়ে নিয়ে যেতো উটের কাফেলা, পাড়ি দিতো মরুভূমির পথ। পরে সেই রেশম থেকেই বাণিজ্যিক এই পথটির নাম হয় সিল্ক রোড। সময়টা প্রায় দুই হাজার বছর আগে, চীনের হান সাম্রাজ্যের আমলে।
কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া সেই পথ পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে চীন। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় চীনের পশ্চিমের সিল্ক রোডের প্রবেশদ্বার বলে পরিচিত শিনজিয়াং প্রদেশের উরুমচি শহরে অত্যাধুনিক স্থলবন্দর তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ৬৭ বর্গ কিলোমিটারের ওপর নির্মিত এই স্থলবন্দরটি ২০১৫ সালে চালু হয়।
গত বছর পর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে সাড়ে ৬ হাজার ফ্রেইট ট্রেন ইউরোপে আসা যাওয়া করেছে। ২১টি রেলপথ সংযোগের মাধ্যমে ১৯টি দেশের সঙ্গে যুক্ত এই বন্দর।
এ বিষয়ে চীন-ইউরোপ রেলওয়ে এক্সপ্রেস কারখানার প্রধান লু শান বলেন,
এই রেলপথ দিয়ে প্রতি মাসে ১০০টি ট্রেন যায়। প্রতি ট্রেনে ৫০ থেকে ৫২টি বগি রয়েছে। প্রায় ১ হাজার ২৫০ টন মালামাল বহন করতে পারে একেকটি ট্রেন।
উরুমচি থেকে রাশিয়া, জার্মানি ও ফ্রান্সে ছেড়ে যায় ট্রেনগুলো। ২০২২ সালে এই রেলপথ দিয়ে প্রায় ৩ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে।
উরুমচি আন্তর্জাতিক স্থলবন্দরের পরিচালক চেন ঝিহং বলেন,
এশিয়া ও ইউরোপের ১৯টি দেশের সঙ্গে এই রেলপথে ২ শতাধিক পণ্য আমাদানি-রফতানি হয়ে থাকে। ২০২২ সালে ১৯ হাজারের বেশি পণ্যবাহী ট্রাক এবং ১ হাজার ১৬৫ ইউরোপগামী পণ্যবাহী ট্রেন এই বন্দর দিয়ে যাতায়াত করেছে। আগের বছরের তুলনায় যা ছিল ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
উরুমচির এই রেললাইন ছাড়াও শিনজিয়াংয়ের আরেক ঐতিহাসিক শহর কাশগর থেকে অপর একটি রেলপথে উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তানসহ মধ্য এশিয়ার ৫টি দেশে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল করে।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে ২০১৬ সালে চীনের বিআরআই বা নতুন সিল্ক রোডে যুক্ত হতে সমঝোতা স্মারকে সই করে বাংলাদেশ। বিআরআইয়ের মূল লক্ষ্যই হলো, সমুদ্রপথে আন্তর্জাতিক বন্দর, ভূমিতে আন্তসীমান্ত সড়ক, উচ্চগতির রেলপথ, বিমানবন্দর এবং ডিজিটাল অবকাঠামো নির্মাণ। এর সমান্তরালে থাকবে বিদ্যুতের গ্রিড, গ্যাসের পাইপলাইন এবং বাণিজ্য-সহায়ক আর্থিক কার্যক্রম। এই বাণিজ্য পথ এশিয়াকে ভূমি-সমুদ্র-আকাশ ও ডিজিটাল মাধ্যমে ইউরোপ ও আফ্রিকার সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
চীন বলছে, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নতুন এক সম্ভাবনা দ্বার সৃষ্টি করবে। তারই দৃষ্টান্ত এই অবকাঠামো। স্থলবন্দরের পাশাপাশি অর্থনৈতিক অঞ্চল, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, টেক্সটাইল জোন প্রতিষ্ঠা করে এক সময়ের অবহেলিত ও মরুময় উরুমচিকে মহাদেশীয় বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হয়েছে।