বিমান দুর্ঘটনার পর উদ্ধার করা মৃতদেহের ডিএনএ পরীক্ষা শেষে ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রুশ কর্তৃপক্ষ।
রাশিয়ার কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বলে রোববার (২৭ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটি বলেছে, ওই বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ১০ জনের সবার পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে এবং ফ্লাইটের যাত্রীদের তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
এর আগে, বুধবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় প্রিগোজিনের ব্যক্তিগত বিমান ‘এমব্রেয়ার লিগেসি’ রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে যাওয়ার পথে বিধ্বস্ত হয়। বিমানটিতে ক্রু সদস্যসহ মোট ১০ জন যাত্রী ছিলেন। দুর্ঘটনায় তারা সবাই নিহত হন।
এ ঘটনায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হাত থাকতে পারে, এমন মন্তব্য করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
দুর্ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন ইঙ্গিত দেন। তার এমন বক্তব্য ছাড়া পশ্চিমা দেশগুলোতেও প্রিগোজিনের মৃত্যু নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ক্রেমলিন প্রিগোজিনকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে–এ কথা ‘ডাহা মিথ্যা’।
অন্যদিকে প্রিগোজিনের মৃত্যুর পরদিন টেলিভিশনে দেয়া এক বক্তব্যে পুতিন বলেন, ‘বিমান দুর্ঘটনায় যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের সবার পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। এটা খুবই হৃদয়বিদারক একটি দুর্ঘটনা ছিল।’
যেভাবে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন প্রিগোজিন
ইউক্রেনের রণক্ষেত্রে যুদ্ধের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রিগোজিন অভিযোগ করা শুরু করেন যে, রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সেনাপ্রধান জেনারেল গেরাসিমভ তার বাহিনীকে পর্যাপ্ত অর্থ, অস্ত্র এবং গোলাবারুদ সহায়তা দিচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে তিনি খোলাখুলিই রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বের সমালোচনা শুরু করেন।
চলতি বছরের ২৩ জুন ওয়াগনার প্রধান একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি রাশিয়ার শীর্ষ সামরিক নেতৃত্বের প্রতি তার ক্ষোভের কথা প্রকাশ করেন এবং প্রথমবারের মতো পুতিনের ইউক্রেন হামলার মূল উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন।
নিজস্ব টেলিগ্রাম চ্যানেলে বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, রাশিয়ার ‘শয়তান সামরিক নেতৃত্বকে’ অবশ্যই থামাতে হবে। ন্যায় প্রতিষ্ঠায় রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করবে ওয়াগনার। এর প্রতিক্রিয়ায় রুশ গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে একটি মামলা ঠুকে দেয়।
পরের দিন ২৪ জুন ওয়াগনার প্রধান ঘোষণা দেন, তার বাহিনী ইউক্রেন থেকে রাশিয়া অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছে এবং সীমান্ত পেরিয়ে রোস্তভ-অন-ডন শহরটির দখলও নিয়েছে। পরে অবশ্য সারাদিন দীর্ঘ আলোচনা শেষে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় সেই অবস্থান থেকে সরে আসে ওয়াগনার।
ওই ঘটনার পর থেকেই প্রিগোজিনকে নিয়ে নানা আলোচনা চলছিল। তার অবস্থান নিয়েও ছিল রহস্য। এর মধ্যেই বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি।