মেহেদী হাসান, শরীয়তপুর ॥
শরীয়তপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের বরাদ্দ থেকে শতকরা ৮ থেকে ১০ ভাগ হারে কমিশন আদায়ের অভিযোগ ওঠেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের বরাদ্দ থেকে কমিশন বাবদ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন।
এতে বিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজ ব্যাহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি অর্থ বছরে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ১২৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটিতে স্লীপের কার্যক্রমের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে, ৭৫টি বিদ্যালয়ে রুটিন মেইনটেন্যান্স কার্যক্রমের জন্য ৪০ হাজার টাকা করে, ১৪টি বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ২ লাখ টাকা করে, ৭টি বিদ্যালয়ে প্লে এক্সারসাইজের জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে মোট ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এছাড়াও অন্যান্য বরাদ্দ রয়েছে।
এসব উন্নয়নমূলক প্রত্যেকটি কাজের বরাদ্দ থেকে ৮ থেকে ১০ শতাংশ হারে কমিশন দিতে হয় শিক্ষা কর্মকর্তা তাজুল ইসলামকে। টাকা না পেলে কোন বিল-ভাউচারে স্বাক্ষর করেন না শিক্ষা কর্মকর্তা। ভুক্তভোগী শিক্ষকরা জানিয়েছেন, এ কমিশনের টাকা উত্তোলনের জন্য শিক্ষা কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম তার এজেন্টস্বরূপ ইউনিয়ন ভিত্তিক কয়েকটি বিদ্যালয়ের তার পছন্দের প্রধান শিক্ষকদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন। যেসকল ইউনিয়নে বিদ্যালয়ের সংখ্যা বেশি সেখানে দু’জন করে প্রতিনিধি দিয়েছেন।
সদর উপজেলার ১২৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটির জন্য ১টি করে বিনামূল্যে ১২৭টি ল্যাপটপ বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এ ল্যাপটপ বিতরণের সময় প্রত্যেকটি বিদ্যালয় থেকে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা করে আদায় করেছেন তিনি। সম্প্রতি অবসরে যাওয়া শিক্ষকের বিদায় সংবর্ধনা দেয়ার নামে উপজেলাধীন সকল বিদ্যালয় থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা তুলে তিনি পকেটস্থ করেছেন। ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করার পর তাজুল ইসলাম গত তিন বছরে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা দাবী করেছেন।
এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকদের মাঝে চাপাক্ষোভ বিরাজ করছে। যেসকল বিদ্যালয় প্রধান কমিশনের টাকা দিতে অস্বীকার করে সেসকল বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে তুচ্ছ অজুহাতে প্রধান শিক্ষকদের শোকজ করাসহ নানাভাবে হয়রানি করেন শিক্ষা কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম। ইতোপূর্বে তাজুল ইসলামকে স্বেচ্ছাচারিতা, অর্থ লোপাটসহ বিভিণœ অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে তাকে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া শাস্তিমূলক বদলী করা হয়েছিল। কিছুদিন যেতে না যেতেই তয়-তদ্বিরের মাধ্যমে শরীয়তপুর সদর উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা চাকুরী করি। ভালমন্দ বলার অধিকার আমাদের নেই।
টাকা দিয়েও বলতে সাহস পাই না। এ বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি কোন টাকা পায়সা নেই নাই। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কিছু শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।