মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শোক প্রকাশ করেছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। এদের অধিকাংশই ইসলামি আলোচক হিসেবে আখ্যায়িত করে তার জন্য দোয়া চাওয়ার পাশাপাশি জান্নাত কামনা করেন। এ দৌড়ে পিছিয়ে ছিলেন না ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও। যদিও এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২১০ জন এ সংগঠনের পদ হারিয়েছেন।
গত ১৪ আগস্ট গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় অসুস্থ হন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাতে মারা যান। সাঈদীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই অন্যদের সাথে শোক প্রকাশের এ মিছিলে যোগ দেন দেশের বিভিন্ন ইউনিটের ছাত্রলীগ নেতারা। তারা সবাই সাঈদীকে নিয়ে ‘ইতিবাচক’ মন্তব্য করেন।
এতে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ। এরপর নিজেদের মধ্যেই শুরু হয় সমালোচনা। প্রশ্ন ওঠে, ছাত্রলীগের মতো একটি সংগঠনের দায়িত্বে থেকে কীভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত একজনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা যায়!
এর পরই কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে। বলা হয়, কাজটি করে তারা সংগঠনের নীতি ও আদর্শবিরোধী কাজ করেছেন। শুরু হয় নেতাদের অব্যাহতি দেয়া ও বহিষ্কারের হিড়িক। ফেসবুকে শোক প্রকাশ করে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন এখন পর্যন্ত এমন ২১০ নেতাকে সংগঠনের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া বা বহিষ্কার করা হয়েছে। যদিও এ তালিকায় আরও কয়েকজন নেতা আছেন বলে জানা গেছে।
ছাত্রলীগের নিজ নিজ শাখা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর করা বিজ্ঞপ্তি থেকে নেতাকর্মীদের অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। এরপরই স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ পাঠানো হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ সংবাদমাধ্যমকে জানান, সাঈদীর মৃত্যুতে ফেসবুকে শোক প্রকাশ করার সব খবর এখনও কেন্দ্রের হাতে পৌঁছায়নি। যেগুলো পাওয়া গেছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আর কিছু কিছু জায়গায় ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সব তথ্য পৌঁছানোর পরই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
গত ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় তিন নেতাকে অব্যাহতি দেয়ার মধ্যদিয়ে ছাত্রলীগে অব্যাহতি দেয়া ও বহিষ্কার শুরু হয়। এরপর নওগাঁয় ১৪, রাজবাড়ীতে ৪, বরিশালের উজিরপুরে ৫, যশোরে ১, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ৬ ও কোটালিপাড়ায় ১, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া-সাতকানিয়ায় ২১, সুনামগঞ্জে ১৫, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ৩, জামালপুরে ১৯, নরসিংদীতে ৬, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৭, ফেনীতে ২০, রংপুরে ১৪, সিলেটে ১২, সুনামগঞ্জে ১৫, লালমনিরহাটে ১২, কক্সবাজারে ৩, সাতক্ষীরায় ৩, পিরোজপুরের নাজিরপুরে ২, পাবনায় ৭, বরিশালে ৪, পটুয়াখালীতে ৩, ভোলার দৌলতখানে ৪, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ এবং সবশেষ গতকাল মঙ্গলবার রাতে ময়মনসিংহের নান্দাইলে ৮ জনকে ছাত্রলীগের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া নেত্রকোনার কলমাকান্দায় একজনকে শোকজ করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল আমিন জানান, সাঈদীর মৃত্যুর পর ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে এমন ৮ জনের খবর পাওয়া গেছে। এটি সংগঠনের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি। তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে এবং স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।