আবারও গজলডোবা ব্যারেজ খুলে দিয়েছে ভারত। এতে সাড়ে ৩ লাখ কিউসেক পানির ঢল সামলাতে পারছে না তিস্তা ব্যারেজ। ভারতের একতরফা এ সিদ্ধান্তে ভাসছে বাংলাদেশের উত্তর জনপদ। এখানকার দ্যিমান বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে আরও। ফলে ক্ষুব্ধ রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার নদীপাড়ের মানুষ চান দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন।
রোববার (১৩ আগস্ট) দিবাগত রাতে তিস্তার পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। সোমবার (১৪ আগস্ট) সকালে ব্যারেজ পয়েন্টে এ পানি প্রবাহিত হয় বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।
তবে মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সকাল থেকে তিস্তার পানি ব্যারেজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতের গজলডোবা ব্যারেজ খুলে দেয়ায় চাপ বাড়ছে তিস্তায়। বাধ্য হয়ে সাড়ে ৩ লাখ কিউসেক পানি নিঃসরণ ক্ষমতার তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাটই খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বানভাসিরা জানান, ভারত থেকে নেমে আসা পানির ঢলে বেড়েই চলছে তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারসহ উত্তরাঞ্চলের ৩৪টি নদ-নদীর পানি। এতে রংপুরের গঙ্গাচড়ার কোলকন্দ এবং লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম তলিয়ে গেছে পানিতে। কিছু এলাকার নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব। এছাড়া ডুবে গেছে মাছের ঘের এবং শাক-সবজির ক্ষেত। সেই সঙ্গে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে স্থানীয়রা। ভারতের বারবার একতরফা সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ বন্যা আতঙ্কে থাকা নদীপাড়ের মানুষ।
এদিকে, তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান বলেন, একমাস পর পর ভারত তাদের গজলডোবা ব্যারেজ খুলে দিলে পানিতে ভাসে বাংলাদেশ। এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে তাদের একটা সমাধানে আসা উচিত। নয়তো প্রতিবছর এভাবেই নদীগর্ভে বিলীন হতে থাকবে সবকিছু।
তিস্তা বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, ‘বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত আগাম তথ্য দিয়ে গজলডোবা ব্যারেজ খুলে দিলে আমরা কিছুটা হলেই রক্ষা পেতাম।’
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, আগামী দুমাসে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ভাঙন রক্ষায় জিওব্যাগ দিয়ে রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি রক্ষায় কাজ করা হচ্ছে।
এ বছর অন্তত ৮ থেকে ১০ বার বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে তিস্তা। পানি বাড়লে প্রতিবারই ভাসে তিস্তাপাড়ের ৯টি উপজেলার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল। ডুবে যায় বাড়িঘর, জমির ফসল।