শাহ মোঃ আব্দুল মোমেন,রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি।।
রৌমারী উপজেলায় নদী ভাঙ্গন রোধের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন ভাঙ্গন কবলিত এলাকাবাসি।
বুধবার সকাল ১১ টার দিকে উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের ঘুঘুমারী গ্রাম সংলগ্ন নদীর কিনারে এ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হয়। গত কয়েকদিন থেকে বন্যার পানি শুকিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তীব্র স্রোতে ব্রহ্মপুত্র নদের ঘুঘুমারী, সুখেরবাতি, গেন্দার আলগা ও চর খেদাইমারী এলাকায় ভাঙ্গনে ভয়াবহ রুপ ধারন করছে। এতে দিনেরাতে তীব্র স্রোতের কারনে গত এক মাসে প্রায় ৪০ টি বসতবাড়ি ও কয়েক একর কৃষি জমি নদের গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।
নিঃস্ব হয়েছে প্রায় ৪০টি পরিবার। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো বর্তমানে কোন স্থান না পেয়ে নদের কিনারের পাশেই পাটের শোলা ও টিনশেড দিয়ে ছাপড়া ঘর উঠিয়ে জীবনের ঝুকি নিয়ে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। নদের ভাঙ্গনের শিকার পরিবারগুলোর পাশে দাড়ায়নি সরকারি বা বেসরকারিসহ কোন জনপ্রতিনিধিগণ। তবে গত মাসে ভাঙ্গন এলাকা নিয়ে একাধিক জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এমপি ও কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেন এবং ভাঙ্গনরোধের আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন হয়নি। ওই সময় শুধু ৬ হাজার জিও ব্যাগ ও কয়েকটি খাবার প্যাকেট ও কিছু টাকা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিবারগুলো খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাছেন।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন রাজ্জাক মোল্লা, রহিজ উদ্দিন মাষ্টার, মামুন,ময়না,কমলা,রুপচান সহ প্রমুখ।
ঘুঘুমারী গ্রামের ময়না খাতুন বলেন, কয়েকদিনের মাথায় আমার বাড়িটি নদীতে ভেঙ্গে গেছে। আমি সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। বাচ্চাদের নিয়ে খুবই কষ্টে আছি। আমরা রিলিফ চাইনা নদী ভাঙ্গন বন্ধ চাই।
একই গ্রামের কমেলা খাতুন বলেন, আমার ঘরবাড়ি ও গাছপালা সব নদীতে ভেঙ্গে গেছে। নিজের জায়গা না থাকায় নদীর পাশেই ছাপড়া তোলে কোন মতো ঠাই করে আছি।
সরকারের কাছে দাবী, নদীটা যেন বানদি দেয়। ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা বলেন, গত মাসে পানি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী নদী ভাঙ্গন এলাকা দেখে গেছেন। আপাতত ভাঙ্গনরোধে ৫০ হাজার জিও ব্যাগ দেওয়ার কথা থাকলেও মাত্র দিয়েছে ৬ হাজার ব্যাগ।
এই ব্যাগ দিয়ে প্রায় ৩০০ হাত নদী ভাঙ্গনরোধ করা সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে ব্যাগ না দেওয়ায় ইতোমধ্যে ৪০টি বাড়ি ভেঙ্গে গেছে। তাদের পূনর্বাসন করা না হলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খুব বিপদে পড়বে। আর যাতে নদী না ভাঙ্গে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
রহিজ উদ্দিন মাস্টার বলেন, প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় নদীর ভাঙ্গন ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। এখনই নদী ভাঙ্গন রোধকরা না হলে ঘুঘুমারীসহ কয়েকটি গ্রাম নদীতে বিলিন হয়ে যাবে। অনেক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি নদীতে বিলিন হওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছে।তাদের পূণর্বাসন করা জরুরী। ইতিমধ্যেই প্রাথমিক বিদ্যালয়,কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে,অনত্র স্থানান্তর করা হয়েছে।হুমকিতে আছে চরশৌলমারী কলেজ, চরশৌলমারী বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,ঘুঘুমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
কুড়িগ্রাম জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বন্দবেড় ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গন রোধে প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। তবে চরশৌলমারী ইউনিয়নের ঘুঘুমারী খেয়াঘাট, চরগেন্দার আলগা এলাকায় ভাঙ্গনরোধের কোন প্রকল্প নেই। উদ্ধ্তন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে,চলমান প্রকল্পে যুক্ত করে আগামীতে বাস্তবায়ন করা হবে। আপাতত জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ হাসন খান বলেন, এর আগেও আমি পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। উপজেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য কিছু সহযোগিতা করা হয়েছিল। এবিষয়ে নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।