‘আগে ভাঙাচোরা ঘরে থাকতাম; মাথা গোঁজার কোন ঠাঁই ছিল না। রোদে পুড়তাম, বৃষ্টিতে ভিজতাম; আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন। এখন সুখে শান্তিতে পরিবার পরিজন নিয়ে থাকতে পারব।’
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীর হাত থেকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার জমিসহ ঘরের দলিলপত্র পাওয়ার পরে এভাবে অনুভূতি প্রকাশ করেন সদর উপজেলার গৌরাং গ্রামের আশি বছরের বৃদ্ধা জয়গুন নেছা।
বুধবার (৯ আগস্ট) সকাল সাড়ে নয়টায় সদর উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার উপজেলা পরিষদের হল রুমে দলিল হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক স্বহস্তে ভূমিহীন গৃহহীন পরিবারের মধ্যে দলিল হস্তান্তর করেন।
ঘর পেয়ে জয়গুন নেছা বলেন, ‘বাঁশপালা দিয়ে ঘর তৈরির ক্ষমতা আমার নাই। এখন আমি পাকা ঘরে থাকবো। তা স্বপ্নেও দেখিনি। শেখ হাসিনা আমাদের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। আমি আর কিছু চাই না।’
সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের বিরামপুর গ্রামের বুদু মিয়া বলেন, ‘দিনমজুরি কইরা সংসার চালাই। নিজের কোন জায়গাজমি নাই। পরের জায়গায় ছাপড়া ঘর তৈরি করে এতোদিন পরিবার নিয়ে ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী পাকা ঘর ল্যাট্রিন টিপকল কারেন্টের লাইনসহ ঘর দিয়েছেন। আজ থেকে আমার দুর্দশার জীবন শেষ হলো।’
রঙ্গারচর গ্রামের রিনা বেগম বলেন, ‘পরের জায়গায় ঘর তৈরি করে বসবাস করতাম। গেল ১৫ বছরে পাঁচবার জায়গা বদল করেছি। এখন নিজের জায়গায় নিজের ঘরে থাকব। এটি আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের।’
হরিণাপাটি গ্রামের মোছাম্মৎ ছালেমা বেগম বলেন, ‘কত রইদে পুড়ছি, বানে ভিজছি। দিনমজুর স্বামীর আয়ে সংসার চলে না, জায়গা কিনে ঘর তৈরি করার সামর্থ্য আমাদের নাই। আজ থেকে আমি জায়গাসহ একটি ঘরের মালিক। এটি সবচেয়ে খুশির বিষয়।’
মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলার ৬৮৩টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে ২ শতাংশ জায়গাসহ বসত ঘরের দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুধবার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের সদস্যদের মধ্যে জায়গার দলিল হস্তান্তর করেন।
চলতি বছরের অক্টোবর মাসে পুরো সুনামগঞ্জ জেলাকে ভূমিহীন গৃহহীনমুক্ত করার আশা প্রকাশ করে জেলা প্রশাসক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে এই ঘর নির্মাণ করে ভূমিহীন গৃহহীন পরিবারের লোকজন স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে পারবেন।
তিনি উপকারভোগীদের উদ্দেশে বলেন, এখন আপনারা ঘর ও জায়গার মালিক হয়েছেন। এটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা আপনাদের দায়িত্ব। আপনারা ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে লেখাপড়া করাবেন। সরকার বিনামূল্যে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছেন। এই সুযোগকে কাজের লাগিয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিজন কুমার সিংহ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এমদাদুল হক শরীফ, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হোসেন প্রমুখ।
সদর উপজেলার ৪৫ টি পরিবারের মধ্যে ঘর ও জায়গার দলিল হস্তান্তর করা হয়।
জেলার দুর্গম জনপদ শাল্লা ও ধর্মপাশা উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুজিব পল্লির এসব এলাকায় বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি, কমিউনিটি সেন্টার, পুকুর, শিশুদের পার্ক, খেলার মাঠ রয়েছে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট প্রতিটি ঘরে রান্নাঘর, স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন রয়েছে।
এ পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলার ৮ হাজার ৪৪৬ টি পরিবারের মধ্যে ৭ হাজার ৭১৭ টি গৃহহীন পরিবারকে ঘরসহ জায়গা হস্তান্তর করা হয়েছে।