অটো রাইস মিল থেকে উড়ে আসা ছাই ও বিষাক্ত ধোঁয়ায় জামালপুর শহরের মুকন্দবাড়ী এলাকায় হাইটেক পার্ক প্রকল্পের নির্মাণ কাজে বিঘ্ন ঘটছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, মিলটির ছাই ও কালো ধোঁয়া বাতাসের সঙ্গে এসে নির্মাণ শ্রমিকদের চোখে মুখে গিয়ে মারাত্মক প্রদাহের সৃষ্টি করছে। এছাড়া আশপাশের বাড়িঘরসহ প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় এ ছাই ও বিষাক্ত ধোঁয়া বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে বিপাকে পড়ছেন ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাসহ পথচারীরাও।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের বজ্রপুরের পালপাড়া এলাকায় ১৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে হাইটেক পার্কের নির্মাণকাজ চলছে। পার্কের সীমানায় স্কার্ফ এগ্রো প্রাইভেট লিমিটেডের অটো রাইসমিল। মিলের চিমনি দিয়ে বাতাসে অনবরত ছাইয়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা ও বিষাক্ত ধোঁয়া পার্কের কাজে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে। ছাইয়ের এসব কণা ছড়িয়ে হাইটেক পার্কের কর্মীদের চোখে-মুখে পড়ছে। ছাইয়ের কণা কারো চোখে সৃষ্টি করছে মারাত্মক প্রদাহ। এতে নির্মাণকাজে ব্যাপক বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
অন্যদিকে সরকারের এত বড় উন্নয়ন প্রকল্প ছাই ও বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে যেন বিলম্বিত না হয়, সে জন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, স্কার্ফ এগ্রো প্রাইভেট লিমিটেডের অটো রাইসমিল থেকে নির্গত ছাই ও বিষাক্ত কালো ধোঁয়ার কারণে তাদের রান্নাবান্নার কাজে সমস্যা হচ্ছে। কোনো খাবারই খোলা রাখা যাচ্ছে না। ছাই উড়ে এসে হরহামেশাই নষ্ট হচ্ছে খাবার। খোলা রাখা যাচ্ছে না বাড়িঘরের জানালা-দরজাও। সব নষ্ট করে ফেলছে এই ছাই। এছাড়া এ এলাকায় যানবাহনে চলাচলরত মানুষজনের চোখে ছাই ও বিষাক্ত কালো ধোঁয়া এসে ঘটছে ছোট-খাটো দুর্ঘটনা। সবমিলিয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে।
চলমান নির্মাণ কাজের শ্রমিক কাওসার হোসাইন বলেন, নির্মাণ কাজের পাশেই একটি রাইসমিল থেকে প্রতিনিয়ত ছাই ও বিষাক্ত কালো ধোঁয়া উড়ে এসে চোখে-মুখে লাগে। এর কারণে আমাদের কাজ করার সময় খুবই সমস্যায় পড়তে হয়। যদি ছাই চোখে ঢুকে যায়, তাহলে চিকিৎসা করাতে অনেক খরচ হয়ে যাবে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
স্কার্ফ এগ্রো প্রাইভেট লিমিটেড রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী একে এম শফিকুল ইসলাম জুলহাস বলেন, এই ধরনের অভিযোগের কারণে পরিবেশ অধিদফতর কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক তিন লাখ টাকা খরচ করে ছাই ও কালো ধোঁয়ার প্রতিরোধক লাগানো হয়েছে। এরপরও যদি সমস্যা হয় তাহলে রাইসমিলটির জায়গা অধিগ্রহণ করুক আমার কোনো আপত্তি নেই।
জামালপুর পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন ও সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম জানান, জামালপুরে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন হাইটেক পার্কসংলগ্ন অটোরাইস মিলের কারণে চরম ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে। হাইটেক পার্কের নির্মাণ শ্রমিকরা শব্দদূষণ এবং স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন। স্থানীয় এ রাইসমিল থেকে নির্গত ছাঁই এবং বিকট শব্দ শুধু নির্মাণ শ্রমিকদেরই না এলাকাবাসীর চোখের, কানের এবং শ্বাসকষ্টের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা অনতিবিলম্বে আবাসিক এলাকা থেকে অটো রাইস মিলটির স্থানান্তরের দাবি করছি। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে এলাকাবাসীদের নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলবো।
জামালপুর পরিবেশ অধিদফতরের জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মুহাম্মদ হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, চলমান হাইটেক পার্ক প্রকল্পের পাশেই একটি রাইসমিল থেকে ছাই উড়ে নির্মাণকাজ ব্যাহত হচ্ছে এ সম্পর্কে একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগপত্রটি আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধান অফিসে পাঠিয়েছি। অফিসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২ জুলাই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ হাইটেক পার্ক নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। জামালপুর পৌরসভার বজ্রাপুর এলাকায় ৫ দশমিক ২ একর জায়গাজুড়ে নির্মাণাধীন এ প্রকল্পের কাজ দুই বছরের মধ্যে শেষ হবার কথা রয়েছে।