মেহেদী হাসান, শরীয়তপুর প্রতিনিধি ॥
শরীয়তপুর সদর উপজেলায় এক শিশুছাত্রকে অপহরণ করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে সন্ত্রাসীরা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওই শিশু শিক্ষার্থীর পিতামাতা সন্ত্রাসীদের চাহিদা মোতাবেক টাকা দিতে না পারায় শিশুটিকে নির্মমভাবে হত্যা করে একটি ইটভাটার পাশে মাটিচাপা দিয়েছে দুবৃর্ত্তরা। নিহত শিশু শিক্ষার্থীর নাম হৃদয় খান নিবিড় (১১)। সে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের খিলগাঁও গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী মনির হোসেন খানের ছেলে। সে স্থানীয় শিশুকানন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
এ ঘটনায় পালং মডেল থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। এ ঘটনার মূলহোতাসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পালং মডেল থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হল মনির হোসেন খানের বাড়ির ভাড়াটিয়া সিয়াম (২০), খিলগাঁও গ্রামের জলিল গাজীর ছেলে শাকিল গাজী (১৮), পাবনার সিংগা বাজার গ্রামের সাইফুল সরদার এবং খিলগাঁও গ্রামের ১৫ বছরের এক কিশোর। স্থানীয় সূত্র ও নিহত শিশুর মামা ইকবাল খান জানান, সোমবার বিকালে নিবিড় বাড়ির পাশে রাস্তায় মোবাইল নিয়ে খেলা করছিল।
এ সময় বাড়ির ভাড়াটিয়া সিয়াম ও তার সহযোগী কয়েকজন দুষ্কৃতকারী মিলে সুকৌশলে নিবিড়কে একটি মোটরসাইকেলে তুলে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। পরে সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টায় নিবিড়ের মা নিপা আকতারের মোবাইলে ফোন করে ২ ঘন্টার মধ্যে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেয়ার জন্য দাবি জানায় তারা। কিন্তু নিবিড়ের মায়ের পক্ষে এতো টাকা যোগার করা সম্ভব হয়নি।
অপহরণকারীরা তিন ঘণ্টা পরে শিশুটিকে ফেরত দেওয়ার কথা বলে ফোন বন্ধ করে দেয়। এ ঘটনার পর পরিবারের লোকজন পালং মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মাহবুব আলম জানান, সোমবার সন্ধ্যায় অপহৃত শিশুটির নানা মমিন আলী খান একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এর পরেই পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শিশুটিকে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। প্রথমে মোবাইল ফোনের তথ্যের ভিত্তিতে সিয়ামকে আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে অপহরণের কথা স্বীকার করে এবং সহযোগীদের নাম প্রকাশ করে।
তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শাকিল ও আরেকজনকে আটক করা হয়। তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে তারা নিবিড়কে খুনের কথা স্বীকার করে। পরে তাদের দেখানো স্থান থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সুপার আরও জানান, ঘটনার তিন দিন আগে নিবিড়কে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী সোমবার বিকালে নিবিড়কে কৌশলে জলিল খাঁর ইটের ভাটা সংলগ্ন আলি হোসেন খাঁর বাড়ির পিছনে নির্জন বাগানে নিয়ে যায় তারা।
তখন নিবিড় চিৎকার করলে অপহরণকারীরা তাকে হাত পা চেপে ধরে মাথায় আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে ঐ ইটভাটার পাশে নদীর তীরে লাশটি বালু চাপা দিয়ে গুম করে পালিয়ে যায়। মাহবুব আলম জানান, সিয়ামের বাড়ি পাবনা জেলায়। সে ১২-১৩ বছর যাবত মনির খানের বাড়িতে ভাড়া থাকে এবং পার্শ্ববর্তী খান ব্রিকস ইটভাটায় গাড়ি চালায়। ঘটনার পর সিয়ামও নিখোঁজ শিশুর স্বজনদের সঙ্গে মিলে শিশুটিকে খোঁজাখুঁজি করছিল। শিশু নিবিড়ের মা নিপা আকতার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার বুকের ধনকে অপহরণ করে আমার কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে।
আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। পালং মডেল থানার ওসি আকতার হোসেন বলেন, আসামিদেরকে অধিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।