পত্রিকায় পাত্রী চেয়ে বিজ্ঞাপন। এছাড়া সখ্য গড়ার চেষ্টা সচ্ছল নারীদের সঙ্গে। কানাডাসহ উন্নত দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের প্রতিশ্রুতি! পরে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে উল্টো ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলা! এমন অভিযোগে রাজধানী থেকে সজল চৌধুরী নামে কথিত এক প্রতারককে গ্রেফতারের পর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, তার জীবিকার প্রধান উৎসই প্রতারণা।
বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ভুক্তভোগী এক নারী জানান, বছর পাঁচেক আগে সজল চৌধুরীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সপরিবারে তাকে কানাডায় স্থায়ী হওয়ার পরামর্শ দেন সজল। তিনিও রাজি হয়ে যান। ২০২২ সাল থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত কয়েক দফায় তাকে ৪৩ লাখ টাকাও দেন। এক সময় আসল পরিচয় প্রকাশ পায় তার। সব টাকা আত্মসাৎ করে উল্টো তার বিরুদ্ধেই চেক ডিজঅনারের মামলা করেন তিনি।
ভুক্তভোগী নারীও প্রতারণার মামলা করেন সজল চৌধুরীর বিরুদ্ধে। মতিঝিল থানার এ মামলায় সম্প্রতি গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তার দাবি, পত্রিকায় ‘পাত্রী চাই’ বিজ্ঞাপন দেখেই নাকি ওই নারী তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। অথচ ভুক্তভোগী নারীর আছে স্বামী ও সন্তান।
ওই নারী বলেন,
‘সোনা বিক্রি করে প্রথমে ৫ লাখ, পরে ৩ লাখ করে তিনবার টাকা দিয়েছি। এভাবে তাকে মোট ১৪ লাখ টাকা দেয়া হয়। এছাড়া ফেনীতে আমার ৬০ লাখ টাকা মূল্যমানের একটি জায়গা ছিল। ৩০ লাখ টাকা বায়না করে তাকে ১৫ লাখ টাকা দিয়েছি। এভাবে বিভিন্ন ধাপে আরও টাকা দেয়া হয়েছে। ভিডিও কল দিয়ে কোরআন শরীফ হাতে নিয়ে তিনি বলেছেন, প্রতারণা করলে তার ওপর আল্লাহর গজব পড়বে। এভাবে আমার সঙ্গে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।’
আর অভিযুক্ত সজল বলেন, ‘তিন পৃষ্ঠার লিখিত চিঠিতি ১৫ বছরের ফিরিস্তি দিয়ে উনি জানিয়েছেন যে, তার স্বামী নাকি যৌতুক চায়; তাকে মেরে ফেলতে চায়। তার এক ছেলে ও ২ মেয়ে আছে। তিনি তার স্বামীর কাছে থাকবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাকে বাঁচানোর অনুরোধ করেছেন আমার কাছে।’
পুলিশ বলছে, এর আগেও তার বিরুদ্ধে প্রতারণার বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেকে শিল্পপতি পরিচয় দেয়া সজল লাখ টাকা বাসা ভাড়া দেন প্রতিমাসে। নিজেকে তিনি এমপি, মন্ত্রীদের আত্মীয় পরিচয় দেন। তার প্রতারণার দুটি পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন তারা। একটি পত্রিকায় পাত্রী চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে, আরেকটি পারিবারিক কলহের মধ্যে আছেন এমন নারীদের খুঁজে বের করে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (মতিঝিল) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম বলেন,
ঢাকা শহরের একটি অভিজাত এলাকায় থাকেন সজল। অনেক টাকা বাসাভাড়াসহ গাড়িতে চলাচল করেন তিনি। শুনেছি, তার একজন বডিগার্ডও আছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। সজল বলেন যে, তিনি বড় শিল্পপতি; কিন্তু কী করেন, সেটা বলতে পারেননি। শুধু বার বার তিনি বিভিন্ন প্রভাবশালীর নাম বলেন। তারা নাকি তার আত্মীয়।
সময় সংবাদের সঙ্গে কথা বলছেন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম
সজল চৌধুরীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে, সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।