বিদ্যালয়ের নতুন ভবনে গিয়ে ক্লাস করার আশা করা হলেও তা আর হয়নি। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও নির্মাণ ঠিকাদারের দ্বন্দ্বে নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ। এতে ক্লাসের জন্য কক্ষ না পেয়ে শিক্ষকরা পড়েছেন বিপাকে। বাধ্য হয়ে তাদের বিদ্যালয়ের সিঁড়ির নিচসহ পাশের একটি বাজারের খোলা টোলঘরে ক্লাস নিতে হচ্ছে।
সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা গেলো ঝালকাঠির রাজাপুরে বড়ইয়া ইউনিয়নের নিজামিয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে।
অফিস সূত্রে জানা গেছে, মেসার্স চাঁন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়ের চার কক্ষ বিশিষ্ট একতলা একটি ভবন নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায়। পরে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আরও ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়। কাজটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুধুমাত্র মাটি কাটা হয়েছে। এরপর আর কাজ এগুয়নি।
বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন ভেঙে ২০২২ সালের ২০ মার্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ মাটি কাটার মধ্যদিয়ে শুরু হয়। নির্মাণ সামগ্রীও আনা হয়। কিন্তু নির্মাণ কাজের শুরুতেই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সঙ্গে কাজের স্থানের বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ সঞ্চালন লাইন সরানো নিয়ে ঠিকাদারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এতে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর থেকেই বিদ্যালয়ের দুটি পুরাতন রুমে পার্টিশন দিয়ে চারটি ক্লাস, সিঁড়ির নিচে একটি ক্লাস এবং বাকি তিনটি ক্লাস বাজারের টোলঘরে নেয়া হচ্ছে। অফিস রুম করা হয়েছে, পাশের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যে। সেটি যে কোন সময় ভেঙে পড়তে পারে। ক্লাসের ভালো পরিবেশ না থাকায় দিনে দিনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ে ২২৪ জন শিক্ষার্থী ছিল। কমতে কমতে বর্তমানে ১২০ জন রয়েছে।
স্কুলের শিক্ষার্থী লামিয়া, আলবাকি, লাইসা ও নয়ন জানায়, টোলঘরে খোলা জায়গায় ক্লাস করতে খুবই অসুবিধা হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের তাপ বেড়ে যায়; তখন আর বসা যায় না। আবার বৃষ্টি আসলে পানিতে বই-খাতা ভিজে যায়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হারুন-অর-রশিদ জানান, স্কুলের পুরাতন ভবন ভেঙে কাজ শুরু করলেও সভাপতি-ঠিকাদারের দ্বন্দ্বের কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে নতুন ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। ভবন না থাকায় সামনে নতুন বছরে নতুন ক্লাসে কোন শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবো না। তাই দ্রুত ভবন নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. জাহিদুল আবেদীন জানান, ‘খেলার মাঠ ছোট করা যাবে না; আর কাজের মান ঠিক রেখে কাজ করতে বলাকে কি দ্বন্দ্ব বলা যায়। ঠিকাদারের কাজের মান খুব খারাপ। কাজের জন্য যে সব নির্মাণ সামগ্রী আনা হয়েছে তা নিম্নমানের। বিদ্যুতের খুঁটি সরাতে যে খরচ হবে তা ঠিকাদারকেই বহন করতে হবে; আমরা তাকে সহায়তা করবো।’
কাজের ঠিকাদার মো. আনোয়ার হোসেন মৃধা মজিবর জানান, ‘বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আমার কাছে কিছু টাকা দাবি করেছিলেন। তাদের দেখানো জায়গায় মাটি কাটা হয়েছিল। এখন টাকা না দিয়ে কাজ শুরু করায় বিদ্যুতের খুঁটি সরিয়ে নিয়ে পিছনে যেতে বলা হচ্ছে। বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর একটা অজুহাত দেখিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।’
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। কাজের সাইট পরিদর্শন করে এরই মধ্যে শিগগিরই কাজ শুরু করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে।’