প্রশাসন অনুমতি না দিলেও শুক্রবার তিন দাবিতে কেন্দ্রঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামী। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন, দলের আমিরসহ নেতাকর্মীর মুক্তি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদের বাদামতল মোড়ে বিক্ষোভকালে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে জামায়াতের নেতাকর্মীরা। তাদের ছোড়া ইটের আঘাতে পুলিশের দুই সদস্য আহত হন। পরে ২১ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রাজশাহী, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ নগরীতে পুলিশের নজর এড়িয়ে মিছিল হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যে করলেও সিলেটে দিনভর চেষ্টায় পারেনি। এদিকে বগুড়ায় সাবেক উপজেলা আমিরসহ তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে না পেয়ে রাজধানীতে ১ আগস্ট এবং সব মহানগরে শুক্রবার বিক্ষোভ কর্মসূচি দেয় জামায়াত। এ কর্মসূচি ঘিরে সব মহানগরেই পুলিশ সতর্ক অবস্থান নেয়। এরই মধ্যে বাদ জুমা বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের বাদামতল মোড়ে জড়ো হয়ে হঠাৎ মিছিল বের করে জামায়াত। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ মিছিলে বাধা ও নেতাকর্মীর ধাওয়া দিলে তারাও ইটপাকেল ছোড়ে। এতে ডবলমুরিং জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মুকুল চাকমা ও কনস্টেবল মো. মুসা আহত হন।
সিএমপি পশ্চিম জোনের উপকমিশনার জসিম উদ্দিন বলেছেন, হঠাৎ জামায়াতের নেতাকর্মীরা স্লোগান দেয়। কর্তব্যরত পুলিশ ধাওয়া দিলে তারা হামলা চালিয়ে আমাদের দু’জনকে আহত ও একটি গাড়ি ভাঙচুর করে। ঘটনাস্থল থেকে ২১ জনকে আটক করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে আগ্রাবাদ ও চৌমুহনী এলাকায় বিক্ষোভ করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। এ সময় তারা জামায়াত সন্দেহে রাস্তা থেকে বেশ কয়েকজনকে ধরে পুলিশে দেয়।
শুক্রবার কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় থেকে মিছিল করে জামায়াত – সমকাল
অনুমতি না পেলেও পুলিশের নজর এড়িয়ে ময়মনসিংহ নগরীর জিলা স্কুল মোড় থেকে শুক্রবার বাদ মাগরিব জামায়াতের মিছিল গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নতুন বাজার মোড়ে শেষ হয়। মিছিলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও ময়মনসিংহ মহানগর আমির মাওলানা কামরুল আহসান এমরুল, মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক শহীদুল্লাহ কায়সার, সহকারী সেক্রেটারি আনোয়ার হাসান সুজন প্রমুখ অংশ নেন।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ শাহ কামাল আকন্দ জানান, সন্ধ্যায় জামায়াত ঝটিকা মিছিল করে। তবে পুলিশের উপস্থিতি পেয়ে নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়।
একইভাবে অনুমতি না পেলেও শুক্রবার কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় থেকে মিছিল করে জামায়াত। মনোহরপুর এলাকায় শেষ হওয়া মিছিলে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগর আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, মহানগরের নায়েবে আমির মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দিন, মহানগরের সেক্রেটারি অধ্যাপক এ কে এম এমদাদুল হক মামুন, সহকারী সেক্রেটারি মোশারফ হোসাইন প্রমুখ অংশ নেন। ময়মনসিংহ নগরীর জিলা স্কুল মোড় থেকে শুক্রবার বাদ মাগরিব বিক্ষোভ মিছিল বের করেন জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা – সমকাল
রাজশাহী মহানগরীতে ঝটিকা মিছিল ও সমাবেশ করেছে জামায়াত। শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলটির দাবি, অনুমতি না পাওয়ায় সকালে মিছিলটি নগরীর বিন্দুর মোড় থেকে শুরু হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শালবাগানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। মিছিলে রাজশাহী মহানগর আমির কেরামত আলী, সেক্রেটারি এমাজ উদ্দিন মণ্ডল, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ আবদুস সামাদ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজশাহী মহানগর সভাপতি ওসামা রায়হান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি আহমেদ আবদুল্লাহ প্রমুখ অংশ নেন।
সিলেটে কৌশলে মিছিলের প্রস্তুতি থাকলেও নগরীর মোড়ে মোড়ে পুলিশ সদস্যরা শুক্রবার দুপুর থেকে অবস্থান নেওয়ায় সেটি পারেননি। মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি শাজাহান আলী জানিয়েছেন, তারা চেষ্টা করছেন বিক্ষোভ করার। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে, তারা যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
এদিকে বগুড়ার শাজাহানপুরে নাশকতা মামলায় বৃহস্পতিবার রাতে তিন জামায়াত নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির আবদুস সালাম (৫৭), লুৎফর রহমান (৫৬) ও মোস্তফা কামালকে (৪২) কারাগারে পাঠানোর কথা জানিয়েছেন শাজাহানপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম।
সূএ: সমকাল