ইউক্রেনে সেনা অভিযান শুরুর পর ওয়াগনার বাহিনীর বিদ্রোহের কারণে সবচেয়ে বড় পরীক্ষার মুখে পড়েন ভ্লাদিমির পুতিন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, কয়েক দশকের মধ্যে রাশিয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুতর নিরাপত্তা সংকট হিসেবে হাজির হওয়া এই বিদ্রোহে স্তব্ধ হয়ে যান পুতিন। এমনকি বিদ্রোহের দিন কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি তিনি। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ক্রেমলিন।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ইউক্রেনে বিশেষ সেনা অভিযান শুরু করে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র আর পশ্চিমাদের হুমকি তোয়াক্কা না করেই সামনে থেকে সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই মস্কোর ওপর নানা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলেও সুকৌশলে সব একাই সামলেছেন পুতিন।
তবে নিজের গড়া বাহিনীই তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসবে তা হয়ত কল্পনাতেও ভাবেননি রুশ প্রেসিডেন্ট। আর এতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েন তিনি।
গেল ২৩ জুন এক অডিও বার্তায় ওগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন অভিযোগ করে বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার হয়ে কাজ করা ওয়াগনার সেনাদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। এর প্রতিশোধ নিতেই মস্কো অভিমুখে অগ্রসর হতে বাহিনীর সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। তার এমন নির্দেশের পরই ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রাশিয়ার শহরগুলোতে প্রবেশ করতে শুরু করে ওয়াগনার সেনারা। ওয়াগনার বাহিনীর এমন কর্মকাণ্ডে হতভম্ব হয়ে পড়েন রুশ প্রেসিডেন্ট।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াগনার গ্রুপ বিদ্রোহ শুরুর পর প্রথম দিকে কিছু সময়ের জন্য ‘প্যারালাইজড’ হয়ে গিয়েছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন। বিষয়টি নিয়ে তিনি এতটাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন যে, সেসময় কোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারেননি।
সংবাদমাধ্যমটি আরও দাবি করেছে, বিদ্রোহের দিন কোনো সিদ্ধান্তমূলক কাজ করেননি পুতিন। এমনকি কোনো নির্দেশও দেননি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্রোহ শুরুর দুই থেকে তিন দিন আগে রুশ গোয়েন্দারা পুতিনকে এ বিষয়ে জানিয়েছিল। তবে তিনি বিষয়টিকে খুব একটা আমলে নেননি। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউরোপের একটি দেশের নিরাপত্তা বিভাগের একজন গোয়েন্দা সদস্য বলেন, ‘বিদ্রোহ শুরুর আগেই তা বানচাল করে দেয়া এবং পরিকল্পনাকারীদের গ্রেফতার করার জন্য পর্যাপ্ত সময় ছিল পুতিনের হাতে।’
ওই কর্মকর্তা জানান, যখন বিদ্রোহ শুরু হয় তখন রুশ প্রশাসন প্যারালাইজড বা স্থবির হয়ে গিয়েছিল। সবাই সিদ্ধান্তহীন হয়ে পড়েছিলেন।
ওয়াগনার বিদ্রোহ কয়েক দশকের মধ্যে রাশিয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুতর নিরাপত্তা সংকট হিসেবে হাজির হয়েছিল। বাহিনীটি এতটাই দ্রুত এগিয়েছিল যে, তারা বিদ্রোহ শুরুর পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের একটি শহর দখল করে এমনকি মস্কোর প্রায় ৫০০ কিলোমিটার কাছে পৌঁছে যায়। যদিও পরে বেলারুশের মধ্যস্ততায় বিদ্রোহ থেকে সরে আসেন প্রিগোজিন।