বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও উন্নত করতে অমীমাংসিত তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যা দ্রুত সমাধানে ভারত সরকারকে সর্বসম্মতিক্রমে সুপারিশ করেছে দেশটির পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সব দলের আইনপ্রণেতাদের সমন্বয়ে গঠিত পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় এ স্থায়ী কমিটি গত ২৫ জুলাই রাজ্যসভা ও লোকসভায় ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি জমা দেয়।
এ কমিটির চেয়ারপারসন বিজেপির পি পি চৌধুরী। এছাড়াও কমিটির অন্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা হলেন: কংগ্রেসের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম, তৃণমূল কংগ্রেসের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেপি এমপি স্বপন দাসগুপ্তাসহ রাজ্যসভা ও লোকসভার ২৭ জন সদস্য।
প্রতিবেদনের একটি বিশেষ অংশে তুলে ধরা হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নানা দিক। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত তিস্তার পানি বণ্টন ইস্যু সম্পর্কে কমিটি অবগত এবং বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ এ ইস্যুটি যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করতে চায়।
‘কমিটি এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে নিয়মিত অর্থবহ সংলাপ শুরু করার জন্য মন্ত্রণালয়কে আহ্বান জানিয়েছে এবং ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অমীমাংসিত বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়ে অগ্রগতি ও ফলাফল কমিটিকে অবহিত করতে পারে।’
তিস্তা ইস্যু সম্পর্কে ভারতের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে পররাষ্ট্রবিষয়ক এ স্থায়ী কমিটি জানিয়েছে, এ বিষয়ে যখন ঐকমত্য হবে, তখন চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এছাড়াও কমিটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, যোগাযোগ, নিরাপত্তা, পানি বণ্টন এবং জ্বালানি খাতে চলমান সহযোগিতা ছাড়াও প্রতিবেশী প্রথম নীতির আওতায় পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে সহযোগিতা, মহাকাশ সহযোগিতা এবং নতুন প্রযুক্তিকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও জোরদার করার ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কমিটি আশা করে যে, সরকার এ ক্ষেত্রগুলোতে নতুন পারস্পরিক লাভজনক উদ্যোগ নিয়ে আসবে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং উভয় দেশের প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির জন্য তা বাস্তবায়ন করবে।’
বাণিজ্যিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশ এ অঞ্চলে আমাদের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং আমরাও এশিয়ায় বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০২১-’২২ সালে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১০.৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৬৮ শতাংশ বেড়ে ১৮.১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। চারটি ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টসহ ৩৬টি স্থল শুল্ক বন্দরের মাধ্যমে দুদেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রফতানি এবং মানুষ চলাচল করে থাকে।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। এগুলো হলো: বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য আইটি সিস্টেম এবং অ্যাপ্লিকেশনে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক, কাউন্সিল ফর সায়েন্টিফিক ৩৮-এর মধ্যে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক এবং শিল্প গবেষণা, ভারত এবং বাংলাদেশ বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিল এবং মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক।
এছাড়াও ইকোসিস্টেম, সাইবার-নিরাপত্তা, উদীয়মান প্রযুক্তি, ফিনটেক সেক্টর (বিশেষ করে ইউপিআই) এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার মতো প্রযুক্তিগত সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা বাড়াতে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। ভারতীয় এ সংসদীয় কমিটি চায় সমঝোতা স্মারক ও আলোচনার মধ্যদিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুদেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়বে।
এদিকে, ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রী ১৩ বার বৈঠক করেছেন বলে কমিটি উল্লেখ করেছে। এছাড়াও মাদক কারবার, জাল মুদ্রা ও মানব পাচার প্রতিরোধে দুদেশের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সক্রিয় সহযোগিতা রয়েছে উল্লেখ করে এ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে কমিটি।