Homeআন্তর্জাতিকইসরাইলে বিচার বিভাগ সংস্কার নিয়ে কেন এত বিক্ষোভ?

ইসরাইলে বিচার বিভাগ সংস্কার নিয়ে কেন এত বিক্ষোভ?

ইসরাইলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ক্ষমতায় রয়েছে চরম ডানপন্থি সরকার। কয়েক মাস আগে ক্ষমতায় আসার পরপরই এ সরকার বিচার বিভাগের ক্ষমতা সংকুচিত করতে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে পার্লামেন্টে। এর পর থেকেই বিক্ষোভে ফেটে পড়ে গোটা দেশ। রাস্তায় নেমে আসেন সাধারণ জনতা। কিন্তু সরকার জনতার সে বাধাকে আমলে না নিয়েই বিলটি পাস করে। গত ২৪ জুলাই বিতর্কিত এ বিচার বিভাগ সংস্কারের বিলে দ্বিতীয় দফা অনুমোদন দেন পার্লামেন্ট সদস্যরা।

তবে এ বিল পাসের ঠিক দুদিন আগে শনিবার (২২ জুলাই) লাখ লাখ মানুষ সড়কে বিক্ষোভে নামেন। তারা এ বিল বাতিলের দাবিতে জেরুজালেমের রাস্তায় লংমার্চ করতে করতে এগিয়ে যান। চলতি সপ্তাহেই জনতার ব্যাপক বিক্ষোভ এবং ধর্মঘট নাড়া দিয়েছে ইসরাইলকে।

কি হয়েছে  এই সপ্তাহে?

গত সোমবার বিতর্কিত বিচার বিভাগ সংস্কারের বিলে দ্বিতীয় দফা অনুমোদন দেন ইসরাইলের পার্লামেন্ট সদস্যরা। কোনো রকম বাধা ছাড়াই পাস হয় বিলটি।

১২০ আসন বিশিষ্ট পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ ডানপন্থি জোট। তারই সূত্র ধরে সোমবার বিলটি ৬৪ ভোট পেয়ে পাস হয়। তবে বিরোধীরা এ প্রস্তাবে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকতে ওয়াক আউট করেছিলেন। বিরোধীদের বাধার মুখেও বিলটি ৬৪ বনাম ৫৬ ভোটে অর্থাৎ ৮ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়। উল্লেখ্য নেসেটে মোট আসন সংখ্যা ১২০টি।

এদিকে, যখন নেসেটে (ইসরাইলি পার্লামেন্ট) বিলটি নিয়ে ভোটাভুটি হচ্ছিল, ঠিক তখন এর বাইরে বিক্ষোভ করছিলেন দেশটির জনগণ। ড্রাম ও বাঁশি বাজিয়ে বিক্ষোভকারীরা বলছিলেন, লজ্জা, লজ্জা। বিক্ষোভকারীদের সরাতে জলকামানের ব্যবহার করে পুলিশ।

এই আইন কি নতুন ক্ষমতা দেবে?

নেতানিয়াহুর জোটের সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। যার অর্থ দাঁড়ায় কোনও আইন পাস করতে বিরোধী দলের সমর্থনের প্রয়োজন নেই।

যেহেতু ইসরাইল পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ নেই, তাই আইনে ‘অযৌক্তিক’ মনে করে কোন সরকারি পদক্ষেপকে বাতিল করার সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতাটি কেড়ে নেয়া হয়েছে।

জেরুজালেমের হিব্রু ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ক্লদ ক্লেইন বলেছেন, আইন সংস্কারের সিদ্ধান্তটি গুরুতর। কারণ সরকার বা একজন মন্ত্রী এখন কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই যাকে চান তাকে নিয়োগ করতে পারবেন। এই আইন সরকারকে সীমাহীন ক্ষমতা দেবে।’

কীভাবে আইনটি ব্যবহার করা হয়েছে?

আইনটি সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার ব্যবহার করা হয়েছে।

ইসরাইল ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউট থিঙ্ক ট্যাঙ্কের সাংবিধানিক আইনের অধ্যাপক সুজি নাভোটের মতে, এটি একটি  হাতিয়ার। আর এ  হাতিয়ার কেবলমাত্র যখন কোনও সিদ্ধান্ত অত্যন্ত অযৌক্তিক হয়, তখন ব্যবহার করা হয়৷

তিনি আরও বলেন, ‘যদি সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আদালত হস্তক্ষেপ করবে।’

ভোট কি চ্যালেঞ্জ করা যাবে?

সোমবার পাস হওয়া আইনটির বিরুদ্ধে ইসরাইল বার অ্যাসোসিয়েশনসহ অনেকেই এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে অসংখ্য পিটিশন দাখিল করেছে।

অধ্যাপক সুজি নাভোট বলেছেন,  এটি সম্ভব যে দেশের সর্বোচ্চ আদালত একটি মৌলিক আইন হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা আইনটিকে বাতিল করে দেবে; যা দেশের আধা-সংবিধানের অংশ।

তিনি আরও বলেন, ‘একটি মৌলিক আইন একটি ইহুদি ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে ইসরাইলের মূল মূল্যবোধকে বাতিল বা লঙ্ঘন করতে পারে না। নেসেট দেশের সত্তা পরিবর্তন করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত নয়। কিন্তু যদি এটা হয়, তাহলে আদালত একটি মৌলিক আইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করতে পারে।’

কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা এর আগে কখনও এমন রায় দেননি।

আশা করা হচ্ছে, কয়েক দিনের মধ্যে আদালত মামলাটি গ্রহণ করবেন কিনা এবং আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত আইনটি সাময়িকভাবে স্থগিত করবেন কিনা তা সিদ্ধান্ত নেবেন।

তবে যে কোনো শুনানি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হতে পারে, যা জনসাধারণকে সব পক্ষকে তাদের যুক্তি উপস্থাপন করার সুযোগ দেয়।

ব্যাপক সংস্কারের জন্য পরবর্তীতে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে?

আগামী সোমবার বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

ইসরাইলের বার-ইলান ইউনিভার্সিটির রাজনীতির প্রভাষক জুলিয়া ইলাদ-স্ট্রেঞ্জার বলেছেন, ‘এই সপ্তাহের ভোট সরকার এবং এর সংশোধনী পরিকল্পনার জন্য একটি বড় জয়। কারণ এ ধরনের বিক্ষোভের মধ্যে প্রথম আইনটি একবার পাস হয়ে গেলে পরেরটি করা সহজ হবে।’

আলোচ্যসূচির অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে: বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারকে বৃহত্তর ক্ষমতা  প্রদান এবং মন্ত্রণালয়ের সাথে সংযুক্ত আইন উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা হ্রাস করা।

ক্লেইন বলেন, ‘প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল বিচারক মনোনীত করার প্রক্রিয়া; তবে যা সোমবারের ভোটে দেয়া হয়েছিল তা নয়।’

ইসরাইলের বিভাজন  কি আরও গভীর হবে?

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে প্রতি সপ্তাহে রাস্তায় বিরোধীদলীয় নেতা ও বিক্ষোভকারীরা যারা বারবার বিক্ষোভ করছেন, তারা বিরোধীদলের সঙ্গে সরকারের আলোচনা নিয়ে বেশ সন্দিহান রয়েছেন।

সরকার তার বিচার সংস্কার নীতি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কারণে আগামী মাসগুলোতে দেশটিতে বিভাজন আরো বেশি গভীর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর