Homeসর্বশেষ সংবাদআত্রাইয়ে রিংজালের ব্যবহারে বিলুপ্ত হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ

আত্রাইয়ে রিংজালের ব্যবহারে বিলুপ্ত হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ

এমরান মাহমুদ প্রত্যয়, নিজস্ব প্রতিবেদক।।
বর্ষা মৌসুম “মাছে ভাতে বাঙালি” এই প্রবাদ এখন আর কেউ বলে না।এক সময় দেশীয় প্রজাতির মাছ নদীনালা,খালবিলে সব সময় পাওয়া যেত।কিন্তু সময়ের আবর্তে নানা রকম মাছ ধরার জাল আর কৌশল আসায় দেশীয় প্রজাতির মাছ বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায়।
বর্তমানে চায়না দুয়ারী বা রিংজাল নামের বিশেষ ধরনের ফাঁদ ব্যবহার করে নির্বিচারে দেশীয় প্রজাতির মাছ শিকার করছে স্থানীয় জেলেরা ছোট যমুনা,আত্রাই, গৌড় নদীসহ নওগাঁর আত্রাইয়ে ছোট-বড় নদী, খাল বিলের বিভিন্ন স্থানে চায়না দুয়ারী বা রিংজাল নামের বিশেষ ধরনের ফাঁদ ব্যবহার করে নির্বিচারে দেশীয় প্রজাতির মাছ শিকার করছে স্থানীয় জেলেরা। খুব সহজে বেশি মাছ ধরার এই ফাঁদের ব্যবহারে ভবিষ্যতে দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্তি ঘটাবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাছের প্রজনন মৌসুমে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের পর এবার ভয়ঙ্কর চায়না দুয়ারী বা রিংজাল নামক ফাঁদে দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরা হচ্ছে। সহজেই সব মাছ ধরতে নদী-খাল জুড়ে জেলেরা অহরহ ব্যবহার করতে শুরু করেছে এই জাল। এই ধরনের ক্ষতিকর ফাঁদ ব্যবহার বন্ধে মৎস্য বিভাগের সংশ্লিষ্টরা অভিযান চালিয়েও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে মৎস্য আইনের বিভিন্ন ধারা-উপধারা প্রয়োগ করে মৎস্য বিভাগ নিয়মিত নদী ও বিলে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। নদী ও বিলে থাকা সব ধরনের দেশীয় প্রজাতির মাছ এই ফাঁদে ধরা পড়ছে। বিশেষ করে মাছের প্রজনন মৌসুমে বিলুপ্ত প্রায়, পুটিমাছ,টেংরা,  ডিমওয়ালা চিংড়ি, গুড়া চিংড়ি, শের পুটি, কই, সিং, টাকি, বোয়াল, শোল, বাইম,সহ প্রাকৃতিক সব মাছ এই চায়না দুয়ারী বা রিংজালে নিধন হচ্ছে।
এই জাল সাধারণত এক থেকে দেড় ফুট উচ্চতা ও ৬০ থেকে ১০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ক্ষুদ্র ফাঁশ বিশিষ্ট ঢলুক আকৃতির হয়ে থাকে। লোহার চারটি রড ও রডের রিং দিয়ে খোঁপ খোঁপ আকারে বক্স তৈরি করে চারপাশ সুক্ষ্ম জাল দিয়ে ঘিরে দিয়ে তৈরি করা হয়। এই ফাঁদের বিশেষ বৈশিষ্ট হলো নদী বা বিলের তলদেশে লম্বালম্বিভাবে লেগে থাকে।
ফলে কোনো প্রকার খাদ্যদ্রব্য ছাড়াই দুদিক থেকেই মাছ ঢুকে আটকা পড়ে। তবে কেউ কেউ অতিরিক্ত মাছের আশায় ঘ্রাণ জাতীয় মাছের খাবার দিয়ে থাকে। একটি চায়না দুয়ারীর রিংজালের দাম (মান ভেদে) চার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
প্রথমদিকে এই ফাঁদ জেলেদের কাছে খুব একটা পরিচিত না থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অধিক মাছ শিকারের আশায় জেলেদের কাছে খুব অল্প সময়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। অতিরিক্ত চাহিদার কারণে বর্তমানে নদী ও বিল বেষ্টিত সব এলাকায় এ জাল তৈরি হচ্ছে।
স্থানীয় জেলেরা জানান, এই চায়না দুয়ারীর রিংজাল সব ধরনের মাছ উঠে আসে, সহজেই মাছ ধরা যায় এবং দাম কম হওয়ায় বেশিরভাগ জেলে বর্তমানে এ দুয়ারী ব্যবহার করছেন।
এছাড়া অনেক মৌসুমী মৎস্য শিকারিরা এই জাল ব্যবহারে করে মাছ ধরতে নেমেছেন। ফলে যারা পুরনো কৌশলে মাছ ধরত, তাদের জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে চায়না দুয়ারীর রিংজাল কিনছেন।
 এলাকার নদী পাড়ের বাসিন্দা বাবু, আশরাফুল,লেবু মিয়া জানায়, বিকাল ও রাতে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকায় করে এই চায়না দুয়ারীর রিংজাল নদীতে ফেলা হয়। সারারাত নদীতে রাখার পর তুলে আনা হয় সকালে। এ সময় জালে ধরা পড়ে দেশীয় প্রজাতির সব মাছ। নদীতে থাকা জলজ প্রাণী এমনকি উঠে আসে মাছ মাছের ডিমও। এ জাল দিয়ে মাছ ধরলে কিছুদিন পর হয়তো নদীতে কোনো মাছ পাওয়াই কঠিন হবে।
শুকটিগাছা গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চায়না দুয়ারীর রিংজাল দিয়ে মাছ শিকারি জেলেরা বলেন, ‘এই রিংজাল দিয়ে মাছ ধরা ঠিক না। তারপরও জীবিকার তাগিদে মাছ ধরতে হয়।
দেশীয় প্রজাতির মাছ নিধন রোধ করতে আইন প্রয়োগ করতে হবে। শুধু প্রচার প্রচারণা মাইকিং লিফলেট বিতরণ করে জেলেদের সচেতন করলে হবে না। রিংজাল বা কারেন্ট জাল  দিয়ে যারা দেশীয় মাছ নিধন করছে তাদের জাল পুরিয়ে দিলেও হবে না।আবার নতুন জাল তৈরী করবে।এদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
আত্রাই  উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা  পলাশ চন্দ্র দেবনাথ  বলেন, দেশি মাছ ধ্বংস করতে মাছ শিকারের মরণ ফাঁদ চায়না দুয়ারীর রিংজাল নতুন সংযোজন। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে আত্রাইয়ের-নদী ও বিল গুলোতে রিং জালের ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অতি শীঘ্রই কারেন্ট জাল ও রিং জালের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তবে শুধু মৎস্য  অফিসের একার পক্ষে এ অভিযান ও রিং জাল নিধন করা সম্ভব নয়।উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় মানুষদের সহোযোগিতা পেলে অভিযোগ পরিচালনা করতে সুবিধা হয়।দেশী প্রজাতি মাছের এমনিতেই সংকট এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশী প্রজাতি মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

সর্বশেষ খবর