বাংলাদেশের অধিকাংশ মেয়ে পড়াশোনায় ভালো হলেও ব্যবসায় অদক্ষ। পাশাপাশি নারীদের ব্যবসায়িক জ্ঞানে ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে নারী উদ্যোক্তাদের অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘একজন নারী উদ্যোক্তা যখন নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ নিতে যান, সেখানে তাকে দক্ষতা ও সক্ষমতার পরিচয় দিতে হয়। ব্যাংকের কাছে নিজেকে প্রমাণ করতে না পারায় অনেক সময় নারীরা ঋণ পান না।’
নারীদের চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, ‘একজন নারীর নিজেকে প্রমাণ করতে দ্বিগুণ দক্ষতার পরিচয় দিতে হয়। সেটা হোক চাকরিক্ষেত্র বা ব্যবসা-বাণিজ্য।’
মন্ত্রী আরও বলেন,
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে দেখা যায়, যত পুরস্কার আছে তার ৭০ শতাংশই মেয়েরা পায়। পড়শোনায় এত ভালো হওয়ার পরও প্রায়োগিক শিক্ষায় পিছিয়ে থাকায় ব্যবসা খাতে তারা সমস্যার মধ্যে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে নারীদের দক্ষতা উন্নয়নের বিকল্প নেই।
নারীদের উন্নয়নের সরকারের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার জয়িতা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে। এতে প্রান্তিক পর্যায়ের নারীরাও উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হতে পারছেন। বাংলাদেশের কৃষি খাতে ৬০ শতাংশ কাজ নারীরা করে থাকেন। পোশাক খাতের সিংহভাগ কাজ হয় নারীদের হাত ধরে।’
নারীর কাজকে শুধু অর্থমূল্যের মাধ্যমে বিবেচনা করা হয় না বলে অনেক সময় গৃহিণীরা একটি দেশের অর্থনীতিতে কতটা ভূমিকা রাখে, তা অনেকেই জানতে পারেন না বলেও জানান দীপু মনি।
তিনি বলেন,
যখনই কেউ বলে সেলাই করতে হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ বা রান্নার কাজ করতে হবে–এক কথায় সবাই মনে করে এটি নারীদের কাজ। কিন্তু যখনই এই কাজকে পেশাদারিত্বের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়, তখন নারীর বিপরীতে পুরুষের সংখ্যা বেশি থাকে। বাবুর্চি বা দর্জি বেশির ভাগই পুরুষ।
তবে অবস্থার উন্নতি হচ্ছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একটা সময় ছিল যখন মাতৃত্বের সব কাজ মায়েদেরই করতে হতো। বর্তমানে পুরুষরাও মাতৃত্বের কাজে দায়িত্ববান হচ্ছেন। সন্তান লালনপালনে নারীর পাশাপাশি পুরুষও ভূমিকা রাখছে।
কর্মজীবী মায়েদের সন্তান লালনপালনের চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন,
কর্মজীবী মায়েদের আগে তিন মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি দেয়া হতো, এখন তা বাড়িয়ে ছয় মাস করা হয়েছে। তবে সন্তান জন্মদানের পর একজন কর্মজীবী মাকে সন্তান লালনপালনে বড় রকমের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি কর্মস্থানে দিবাযত্নের ব্যবস্থা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের সিইও নাসের এজাজ বিজয় বলেন, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-এর ‘অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ফর এন্ট্রাপ্রেনিউর’ প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল শিক্ষার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। এর ব্যবহার দেশব্যাপী নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে ও তাদের স্বপ্ন পূরণে ভূমিকা রাখবে। এই লার্নিং প্ল্যাটফর্মের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, ব্যবহারকারীরা ঘরে বসেই তাদের সুবিধামতো শিখতে পারবে এবং আরও ভালোভাবে তাদের জীবনমান, ব্যবসা এবং ভবিষ্যৎ উন্নত করে তুলতে পারবে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ও ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং বিটপী দাশ চৌধুরী বলেন, এই প্ল্যাটফর্মটি কমিউনিটিভিত্তিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করবে এবং ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তাদের আরও দক্ষ ও আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করবে। ‘অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ফর এন্ট্রাপ্রেনিউর’ প্ল্যাটফর্মটি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের ফিউচারমেকারস প্রোগ্রামের আওতায় ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত করতে সাহায্য করবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও হেড অব কনজুমার সাব্বির আহমেদ, ইউসিইপি বাংলাদেশ-প্রাইভেটের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড. মো. আব্দুল করিম, মিডাসের চেয়ারম্যান জাহিদা ইস্পাহানি প্রমুখ।