যখন লাগাতার বাড়ছে নির্মাণ সামগ্রীর দাম, তখন হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট বলছে, সনাতনী ইটের বদলে হলোব্লক ব্যবহার করলে খরচ কমবে প্রায় ৩০ শতাংশ। এমন গবেষণা ও ব্যবহার বিধি থাকার পরও এর ব্যবহার প্রত্যাশা মতো না বাড়ার কারণ হিসেবে প্রচারের অভাবকে দায়ী করছে সংস্থাটি।
সরেজমিনে হলোব্লক তৈরির একটি কারখানায় দেখা গেছে, একের পর এক তৈরি হচ্ছে হলোব্লক, যা ব্যবহার হবে ইটের বদলে। এক্ষেত্রে পোড়ানো হচ্ছে না কাঠ-কয়লা-মাটি। স্বাভাবিকভাবেই নিঃসরণ হচ্ছে না পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্বনও। সনাতনী ইটভাটার চেয়ে অনেক কম জমি লাগে এর একটি কারখানা স্থাপনে। এটি ব্যবহারেও মজবুত ও সাশ্রয়ী।
এ বিষয়ে হলোব্লক তৈরি করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান বরুয়া বিল্ডার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আল আমিন বলেন, ৫টি ইটে যা আসে, এটির একটি ব্লকে তা আসে। বর্তমানে একটি ইটের দাম ১৫ থেকে সাড়ে ১৫ টাকা। সেক্ষেত্রে ৫টি ইটের হিসাব করলে দাঁড়ায় ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। সেখানে একটি ব্লকের দাম ৪২ থেকে ৪৫ টাকা।
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক ডেভেলপার কোম্পানি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। পাশাপাশি যারা নিজেরা বাড়ি করছেন, তারাও যোগাযোগ করছেন।’
ফ্ল্যাট তৈরিতে ইটের বদলে হলোব্লক ব্যবহার করা এক ডেভেলপার বলেন, ‘সাধারণ ইটের তুলনায় এটি অনেক ভালো। আমার ৩৫ শতাংশ খরচ কমে গেছে। আগে একটি ফ্ল্যাটে আমার কমপক্ষে ৬ হাজার ইট লাগতো। সেই তুলনায় প্রায় ৪ হাজার ২০০ হলোব্লকে আমার ফ্ল্যাটের কাজ পুরোপুরি শেষ।’
মূল উপাদন সিমেন্ট, পানি, বালির সঙ্গে নুড়ি পাথর, পাথরের গুঁড়া, ফ্লাই অ্যাশ, রিসাইকেল ম্যাটেরিয়ালসহ দরকার মতো ৮টি উপাদানের মিশ্রণে এসব হলোব্লক তৈরি হয়। এতে দরকার হয় না ঊর্বর কৃষি জমি নষ্ট করা একবিন্দু মাটিও।
এ প্রসঙ্গে হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এইচবিআরআই) বলছে, পরিবেশবান্ধব এসব স্থাপনা উপাদান তৈরিতে যেমন চাপ সহনীয় পিএসআই নিয়ন্ত্রণের সুযোগ রয়েছে, তেমনি একটি হলোব্লক পোড়ামাটির সাড়ে ৪টি ইটের সমান কাজ করায় স্থাপনা নির্মাণে খরচ কমছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। একই সঙ্গে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে তাপ ও শব্দ নিয়ন্ত্রণে।
এইচবিআরআই সিনিয়র রিসার্চ অফিসার কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘আমি যদি হলোব্লকের সুবিধাগুলো বলি, এটি থারমাল ইনসুলেটর হিসেবে কাজ করে এবং সাউন্ড প্রুফ।’
তবে প্রচারের ব্যাপক অভাব থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইটের বিকল্পও যে কিছু রয়েছে, যেটি আমরা ব্যবহার করতে পারি, এটি মানুষ এখনো জানে না। এটি মূলত তাদের জানাতে হবে। একটি হলোব্লক যদি সাড়ে ৪টি ইটের সমান হয়, সেক্ষেত্রে ম্যানারিয়াল কষ্ট বা উৎপাদন খরচ ও শ্রমিক বাবদ খরচসহ আরও কিছু খরচ কম হয়। এটি ব্যবহার করলে নির্মাণ ব্যয় অত্যন্ত ৩০ শতাংশ কমে যায়।’
এদিকে, সবুজ বাণিজ্যের এ অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে দরকারি মেশিন আমদানিতে উচ্চ শুল্কবাধাও দূর করার তাগিদ দিলেন উদীয়মান উদ্যোক্তারা।
সেইফওয়ে টেকনোলজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফারুক খান বলেন, ‘আমরা যারা বাণিজ্যিকভাবে এসব মেশিন আমদানি করে দেশের ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের দেই, সেখানে সরকারের ট্যারিফ অনুসারে ২৭ শতাংশ ডিউটি দিতে হয়। সুতরাং, এতে দেখা যায় একটি মেশিন চীনে যদি ২৫ হাজার বা ৩০ হাজার ডলারের হয়, সেটি আমদানি করে এনে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করা পর্যন্ত কাস্টমস ডিউটি, ভ্যাট-ট্যাক্স, ফ্রেইট খরচ, পরিবহন ভাড়া ইত্যাদি মিলিয়ে ৪০ থেকে ৪২ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ে যায়।
তাই এদিকে সরকারের নজর দেয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে সরকার আমদানি শুল্ক কমাতে পারে। ভ্যাট কমালে হয় তো যারা ক্ষুদ্র বা মাঝারি ইন্টারপ্রাইজ, তারা এসব পরিবেশবান্ধব কারখানা করার দিকে ঝুঁকবেন।
পরিবেশবান্ধব এসব ইট-ব্লকের ব্যবহার বাড়াতে ২০১৯ সালে নতুন করে আইন করা হলেও তা বাস্তবায়নে ব্যাপক ধীরগতির অভিযোগও রয়েছে খাত সংশ্লিষ্টদের।