রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্রিমিয়া সেতু। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনীর প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহের প্রধান পথ এটি। তাই বারবার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে ইউরোপের সবচেয়ে বড় এই সেতুটি। অন্যদিকে, ক্রিমিয়া সেতু সুরক্ষিত রাখতে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়াও।
গেল বছরের অক্টোবরে বিস্ফোরকবাহী একটি ট্রাক থেকে হামলা চালানো হয় ক্রিমিয়া সেতুতে। এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেতুর সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। এরপর রুশ কর্তৃপক্ষের বেশ কয়েকমাসের চেষ্টায় গেল ফেব্রুয়ারিতে আবারও চালু হয় সেতুটি। এ হামলাকে ইউক্রেনের ‘অন্তর্ঘাত’ বলে দাবি করে আসছে মস্কো। তবে তা বরাবরই অস্বীকার করেছে কিয়েভ।
সোমবার (১৭ জুলাই) আবারও চালকবিহীন দুটি নৌযান থেকে হামলা চালানো হয় ক্রিমিয়া সেতুতে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেতুটির সড়ক যোগাযোগ। তবে রেললাইনে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছে মস্কো। এ হামলার জন্যও ইউক্রেনীয় বাহিনীকে দায়ী করেছে ক্রেমলিন।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে তাই প্রশ্ন উঠেছে, বারবার কেন লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে ক্রিমিয়া সেতু? এক বিশ্লেষণে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য এখন ক্রিমিয়া উপদ্বীপে নিজেদের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
ক্রিমিয়া উপদ্বীপ একসময় ছিল ইউক্রেন ভূখন্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ২০১৪ সালে সামরিক অভিযানের মধ্য দিয়ে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নেয় রাশিয়া। এর জবাবে মস্কোর ওপর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিলেও তা আমলে নেয়নি রাশিয়া। বরং ক্রিমিয়া দখলের পর রাশিয়ার মূল ভূখন্ডের সঙ্গে স্থল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় কার্চ প্রণালীতে ৩৭০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ক্রিমিয়া সেতু বা কার্চ সেতু।
২০১৮ সালে ১২ মাইল দৈর্ঘ্যের ইউরোপের দীর্ঘতম এ সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। রেল চলাচল শুরু হয় এর এক বছর পর। সরাসরি যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয় রাশিয়ার ক্রাসনোডর এবং ক্রিমিয়া উপদ্বীপের মধ্যে। চালুর পর সেতুটি হয়ে ওঠে পুতিনের ‘দম্ভের স্তম্ভ’।
রাশিয়া ও ক্রিমিয়া উপদ্বীপের মধ্যে পণ্য ও জ্বালানি সরবরাহ এবং যোগাযোগের একমাত্র পথ এই ক্রিমিয়া সেতু। আর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর এ সেতুর গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। এটি পরিণত হয় যুদ্ধ পরিচালনায় রাশিয়ার অন্যতম প্রধান হাতিয়ারে। এই সেতুর সাহায্যে ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধরত রুশ সেনাদের জন্য গোলাবারুদ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহ করে আসছে মস্কো।
এসব কারণে রাশিয়ার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এ সেতু পরিণত হয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনীর আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্যবস্তুতে। ক্রিমিয়া সেতুতে হামলার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনীর রসদ সরবরাহ। তাই বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে করে বাড়তি সুবিধা পাবে ইউক্রেনীয় সেনারা। আর ইউক্রেনের অভ্যন্তরে থাকা রুশ সেনাদের কোণঠাসা করা সহজ হবে কিয়েভের জন্য।