বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নিরপেক্ষ সরকার বা নির্দলীয় সরকার থাকলে আওয়ামী লীগের ভাত নেই। সবাইকে বোকা বানিয়ে বিচারব্যবস্থার ওপর জোর দিয়ে, খায়রুল হকের ওপর জোর দিয়ে পার্লামেন্টে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান বাতিল করে দেয় সরকার। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে আওয়ামী লীগের ভাত নেই। ত্রিশটি আসনও পেত না।
আজ শুক্রবার (১৪ জুলাই) বিকেলে নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে মেহনতি মানুষের পদযাত্রায় জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। পদযাত্রায় বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে বলেন, তারা বলেন নির্বাচন আমাদের অধীনে হবে। আমরাই ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করব। আমরাই ভোট দেওয়াব, আমাদের মতো করে সবাইকে ভোট দিতে হবে। নইলে চলে যেতে হবে। এমনকি আমাদের ভোটারদের এখনো বলে ভোট কাকে দিবা। যদি বিএনপিকে ভোট দিতে চাও তাহলে তোমার ভোট হয়ে গেছে। ভোটকেন্দ্রে যেতেই দেয় না।
শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের বলেন তাদের অধীনে নাকি ভোট দিতে হবে। ২০২১ সালে শেখ হাসিনা আমাদের ডেকে বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে সবাই ভোট করতে পারবেন। সবাইকে বলেন, ভোট করতে আমি কোনো বাধা দেব না। আমরা ভাবলাম, বোধ হয় শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। কী করা যাবে বলেন। ভূতের মুখে রাম নাম। আগের রাতে ভোট হয়ে গেল। এখন আবার বলছেন, আমরা সুন্দর ভোট করব। আমাদের অধীনেই ভোট হবে। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন হবে। আহা রে কী আবদার। শিয়ালের কাছে বারবার কুমিরের বাচ্চা দেওয়া যাবে না। বারবারই খেয়ে ফেলবে। আমরা এবার আর খেতে দেব না ।’
তিনি আরো বলেন, ‘এবার মানুষ জেগে উঠেছে। এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনা কবে যাবি। কিভাবে তাদের বিশ্বাস করব। সুবর্ণচরে একজনকে শুধু ধানের শিষে ভোট দেওয়ার অপরাধে অকথ্যভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এভাবে তারা অসংখ্য মা-বোনকে বেইজ্জত করেছে। আজকে শ্রমিক ভাইয়েরা বাজারে যেতে পারেন না। বাজারে গেলে চাল কিনতে পারেন না, ডাল কিনতে পারেন না, মাংস কিনতে পারেন না, সবজি কিনতে পারেন না।’
দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। এটা একটা লুটের রাজত্বে পরিণত করেছে। ব্যাংকগুলো সব লুট করতে করতে খালি করে দিয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। আবার পাচারের টাকা দেশে নিয়ে আসার একটা বিধান করেছে। দেশে নিয়ে এলে আবার আড়াই পার্সেন্ট ইনসেনটিভ পাবে। কী মজা, আমাদের পকেট থেকে টাকা কেটে রেখে ট্যাক্সের টাকা নিয়ে তারা আবার চোরদেরকে পুরস্কার দিচ্ছে। এ সমস্যা শুধু বিএনপির নয়, এ সমস্যা শুধু খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নয়। এ সমস্যা সমগ্র জাতির। আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব আজকে বিপন্ন। আমাদের আজকে ভোট দেওয়ার অধিকার নেই।
পদযাত্রায় আরো বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, সাবেক এমপি রেহানা আক্তার রানু প্রমুখ।
এ সময় নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ আজাদ, বিএনপির সহযোগী সংগঠন কৃষকদল, শ্রমিকদল, মৎস্যজীবীদল, তাঁতীদল ও জাসাসের উদ্যোগে এই পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। এ পদযাত্রায় বৃহত্তর নোয়াখালীর পাঁচটি জেলার নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।