কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সার্বিক পরিস্থিতি ঘুরে দেখেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলটি সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শন ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করে ক্যাম্প ব্যবস্থাপনার জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেন। এর জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করে সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন।
বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক শেষে এমন তথ্য জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান।
উজরা জেয়ার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি বুধবার টানা ৯ টানা ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন কক্সবাজারে। প্রতিনিধি দলটি বুধবার সকাল ৯টায় বিমান যোগে কক্সবাজার পৌঁছেন। এরপর যান উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। যেখানে সকাল ১০টা ৫০ মিনিট থেকে ৩টা পর্যন্ত ছিলেন। ওখান থেকে প্রতিনিধি দলটি আসেন কক্সবাজার শহরে। যেখানে প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার শহরে ফিরে বিকালে কক্সবাজারে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থা, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার থেকে বিমান যোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন।
এসব পরিদর্শনকালে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। তবে সন্ধ্যায় প্রতিনিধি দলটি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয় ত্যাগ করার পর কথা বলেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। ২০১৭ সাল থেকে এখানে আন্তর্জাতিক, দেশী-বিদেশী যে সব সংস্থা কাজ করেন তাদের অনেক সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সহায়তা পান। বিশেষ করে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা যে খাদ্য সরবরাহ করে তাতে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা রয়েছে। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে এসব বিষয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে।
বৈঠকে প্রতিনিধি দলকে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেয়ার বিষয়টি অবিহত করেছেন উল্লেখ করে মিজানুর রহমান জানান, এ পর্যন্ত ২ বার রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমানো হয়েছে। প্রথমে ১২ ডলার থেকে ১০ ডলার এবং ১ জুন থেকে ৮ ডলার করা হয়েছে। বিষয়টি জানার পর প্রতিনিধি দলটি সাহায্য ঘোষণার আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি জানান, প্রতিনিধি দলটি ক্যাম্পে গিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি দেখেছেন। প্রতিনিধি দলটি ইউএনএইচসিআর- পরিচালিত রোহিঙ্গাদের রেজিস্ট্রেশন সেন্টার, পুষ্টি কেন্দ্র, খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। কথা বলেছেন রোহিঙ্গাদের সঙ্গে। এসব দেখে ক্যাম্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রতিনিধিরা। এর জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন। বৃহস্পতিবার ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে আলোচনা করবেন। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা করবেন প্রতিনিধিরা।
এদিকে, ক্যাম্প পরিদর্শন করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের কাছে দ্রুত স্বদেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের দাবি জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলাপকালে রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, ক্যাম্পে আশ্রিত জীবন অনেকটা বন্দীজীবন। এমন জীবন চাই না, দ্রুত স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরতে চাই। এজন্য মিয়ানমারকে জোর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে স্বদেশে ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা।
এসময় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের কাছে ক্যাম্পের শিক্ষা ব্যবস্থা, খাদ্য, নিরাপত্তা বিষয়েও আলাপ করেছেন।
পরিদর্শনকালে প্রতিনিধি দলের প্রধান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার হাতে রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়েরের নেতৃত্বে একদল রোহিঙ্গা একটি আবেদনও দেন। যেখানেও প্রত্যাবাসনের দাবি জানানো হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি বুধবার সকাল ৯টায় বিমান যোগে কক্সবাজার পৌঁছেন। যেখান থেকে সড়ক পথে যাত্রা দেন উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দিকে। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে প্রতিনিধি দল উখিয়া বালুখালী ৯ নাম্বার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইউএনএইচসিআর- পরিচালিত রোহিঙ্গাদের রেজিস্ট্রেশন সেন্টার পরিদর্শন করেন। ওখান থেকে হেঁটে এরপর একে একে পুষ্টি কেন্দ্র, ডব্লিউএফপি পরিচালিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।