আটলান্টিকের দুই তীরের দেশগুলোর জোট ন্যাটোর এশিয়ামুখী প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা দৃঢ়ভাবে মোকাবিলার প্রতিজ্ঞা করেছে চীন। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) ন্যাটোর প্রজ্ঞাপনে চীনকে জোটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আখ্যায়িত করার প্রতিক্রিয়ায় বেইজিং এই প্রতিজ্ঞা জানায়। খবর আল জাজিরার।
মঙ্গলবার লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে শুরু হওয়া ন্যাটোর সম্মেলনে ঘোষিত প্রজ্ঞাপনে চীনকে জোটটির স্বার্থ এবং নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়।
কড়া ভাষায় লেখা সেই প্রজ্ঞাপনে ন্যাটো নেতারা বলেছেন, ‘‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীন তার ‘বিবৃত উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং জবরদস্তিমূলক নীতি’ দিয়ে জোটের স্বার্থ, নিরাপত্তা এবং মূল্যবোধকে চ্যালেঞ্জ করেছে।’’
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীন বিশ্বে নিজের পদচারণা এবং অবস্থান নিশ্চিত করতে রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সামরিক খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেছে। বিপরীতে দেশটি তার কৌশল, উদ্দেশ্য এবং সামরিক কাঠামোর বিষয়ে সবসময়ই অস্পষ্ট তথ্য হাজির করেছে।’ প্রজ্ঞাপনে চীনকে নিয়ে মোট ৯০টি পয়েন্ট তুলে ধরা হয়েছে।
ন্যাটোর প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীন ন্যাটো জোট এবং এর মিত্রদের লক্ষ্য করে নোংরা হাইব্রিড এবং সাইবার অপারেশন চালাচ্ছে। দ্বান্দ্বিক বক্তব্য এবং ভুল তথ্য ব্যবহার করে জোট এবং মিত্রদের নিরাপত্তার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে।’
ন্যাটোর প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, চীন ও রাশিয়া একটি গভীর কৌশলগত অংশীদারিত্বে জড়িত এবং দেশ দুটি ‘নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা’কে বাতিল করার জন্য পরস্পরকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টায় জড়িত। প্রজ্ঞাপনে ন্যাটোর নেতারা চীনকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করার এবং রাশিয়ার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসী যুদ্ধের নিন্দা করার আহ্বান জানান।
তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ন্যাটোর প্রজ্ঞাপনের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, ন্যাটো ইচ্ছা করেই চীনের অবস্থানকে বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে এবং সজ্ঞানে চীনকে অপমানিত করার চেষ্টা করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের চীনা মিশন মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে এই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করছি।’
চীন ও উত্তর কোরিয়ার ইস্যুতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসগারীয় অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস হিপকিন্স এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করেছেন। বিষয়টি চীন এবং উত্তর কোরিয়ার উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে।
এর আগে মে মাসে কিশিদা জোর দিয়ে বলেছিলেন, জাপানের ন্যাটো সদস্য হওয়ার কোন পরিকল্পনা নেই। তবে ন্যাটো বলেছিল, তারা জাপানে ন্যাটোর এশিয়া অঞ্চলের লিয়াজোঁ অফিস খোলার পরিকল্পনা করছে।
ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে চীনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিশন বিবৃতিতে বলেছে, ‘এশিয়া-প্রশান্ত মহাসগারীয় অঞ্চলে ন্যাটোর সম্প্রসারণ প্রচেষ্টার বিরোধিতা করছে এবং বিষয়টি নিয়ে জোটকে সতর্কও করা হলো। যদি কোনো কার্যক্রম চীনের বৈধ অধিকার এবং স্বার্থ বিপন্ন করে তোলার চেষ্টা করে তবে চীন তা অবশ্যই দৃঢ়ভাবে মোকাবিলা করবে।’