ভ্রমণ পিপাসু যাত্রীদের জন্য নির্মাণাধীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমোদতরী ‘আইকন অব দ্য সিস’ এর কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং শেষ মুহূর্তের কাজ। এরমধ্যেই জাহাজটি পানিতে ভাসানো হয়েছে। খোলা সমুদ্রে এখন এটি ট্রায়াল দিচ্ছে। আগামী জানুয়ারিতেই শুরু হবে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা।
একসময় টাইটানিকই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজ। পরবর্তীতে সময়ের পরিক্রমায় সমুদ্রে ভেসেছে আরও বহু সুবিশাল প্রমোদতরী। টাইটানিকের চেয়ে পাঁচগুণ বড় এই ‘আইকন অব দ্য সিস’।
টাইটানিকের ভীতি কাটিয়ে শিগগিরই পানিতে নামছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই প্রমোদতরীটি। ফিনল্যান্ডের মায়ার টার্কু শিপইয়ার্ডে ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য নির্মাণাধীন অত্যাধুনিক এ জাহাজটির কাজ শুরু হয় তিন বছর আগে। এখন নির্মাণ কাজ একেবারে শেষ ধাপে। এরইমধ্যে সাগরে শুরু হয়েছে জাহাজটির ট্রায়াল রান। আগামী অক্টোবর নাগাদ জাহাজটি রয়্যাল ক্যারিবিয়ানের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আর এটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হবে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে।
যা রয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই প্রমোদতরীতে
আইকন অব দ্য সি-এর দৈর্ঘ্য ৩৬৫ মিটার বা ১১৯৮ ফুট এবং ওজন ২ লাখ ৫০ হাজার ৮০০ টন। দৈর্ঘ্য এবং ওজন থেকেই অনুমান করা যায় জাহাজটি আসলে কতটা প্রকাণ্ড। তবে প্রকাণ্ড হলেও জাহাজটি নির্মাণে খুব বেশি সময় নিচ্ছে না মেয়ার টুরকু। কারণ, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়েছে এই জাহাজটির নির্মাণ কাজ। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছরের অক্টোবরেই প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে পানিতে নামবে। ফলে অনুমান করা কষ্টকর নয় যে, প্রায় চোখের পলকে; দুই বছরেরও কম সময়ে জাহাজটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হতে যাচ্ছে।
তবে জাহাজটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে, ক্যারিবিয়ান সাগরে। জাহাজটিতে একসঙ্গে প্রায় ৮ হাজার মানুষ অবস্থান করতে পারবে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৬১০ জন হবে জাহাজটির যাত্রী। এই যাত্রীদের সেবার জন্য এবং জাহাজ পরিচালনার জন্য থাকবে ২ হাজার ৩৫০ জন হবে জাহাজটির ক্রু। বলাই যায়, রীতিমতো রাজকীয় আয়োজন।
আয়োজন কতটা রাজকীয় তা খানিকটা টের পাওয়া যায় ২০ তলা বিশিষ্ট জাহাজটিতে যাত্রীদের জন্য রাখা বিভিন্ন সুবিধা থেকে। যেমন যাত্রীরা চাইলেই ৭টি পুলে সাতার কাটতে পারবেন। আবার যদি কারো মনে হয়ে যে, একটু উষ্ণ পানির প্রসবনে গা ভিজিয়ে নেয়া দরকার তবে তার জন্য থাকবে ৯টি ওয়ার্লপুল; যেখানে সাধারণত তীব্র বেগে উষ্ণ পানির ধারা প্রবাহিত হয়।
কেবল পুলই নয় জাহাজটিতে ভোজন রসিকদের জন্যও রয়েছে সুব্যবস্থা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সেরা ৪০ ধরনের ডাইনিং মেন্যু পাওয়া যাবে জাহাজটিতে। এছাড়া অন্যান্য খাবারের সুবিধা তো থাকবেই। আবারও কেবল আহার নয়, জাহাজটিতে থাকছে একাধিক পানশালাও। যেখানে চাইলে যাত্রীরা যেকোনো সময় নিজেদের গলা ভিজিয়ে নিতে পারবেন।
প্রমোদতরীতে কেবল ভোজন বা পানাহার থাকবে আর সাতার কাটবে-এমন কারণে মানুষ নিশ্চয়ই যাবে না। যাত্রীদের তাই আলাদা মাত্রায় আনন্দিত করতে সেখানে থাকবে বিভিন্ন ধরনের চিত্ত বিনোদন আইটেম।
জাহাজটি মোট আটটি আলাদা অংশে বিভক্ত। প্রত্যেকটি ভাগের বৈশিষ্ট্য আলাদা। কোনোটি তরুণ যুগলদের জন্য, আবার কোনোটি বৃদ্ধদের মনোরঞ্জনের জন্য। আছে শিশুদের জন্য আলাদা এলাকাও। যেখানে কেবল শিশুদের জন্য নির্ধারিত সেবাই মিলবে।
বিশালাকৃতির এই জাহাজটি চলাতে আশ্রয় নেয়া হয়েছে তুলনামূলক আধুনিক পদ্ধতির। জাহাজটির মূল জ্বালানি হিসেবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হলেও এতে ফুয়েল সেল প্রযুক্তিও রাখা হয়েছে।
এরইমধ্যে রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল জাহাজটির প্রথম যাত্রার জন্য প্রি-বুক অর্ডার শুরু করেছে। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব ওয়েবসাইটে গিয়ে বুক করতে পারা যাবে।
উল্লেখ্য বিশ্বের বর্তমান সর্ববৃহৎ প্রমোদতরীর মালিকানাও রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনালের। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানাধীন ‘ওয়ান্ডার অব দ্য সি’র দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৮৮ ফুট। জাহাজটিতে মোট ১৮টি তলা রয়েছে।