চাহিদা ও জোগানের সঠিক তথ্যের পাশাপাশি উৎপাদন থেকে বাজার পর্যন্ত–সুনির্দিষ্টভাবে কার কাছে রয়েছে কতটুকু লবণ, সেই ডেটাবেজ তৈরি করেছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। এই তথ্য-উপাত্ত দেখে সহজেই অদৃশ্য হাতের কারসাজি মোকাবিলা করে বাজারকে স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হচ্ছে বলে দাবি সংস্থাটির।
বাজারে গেলেই শোনা যায় সিন্ডিকেটের উপস্থিতির কথা, যারা কারসাজি করে বাড়িয়ে দেয় পণ্যমূল্য ও অস্থিরতা। এমনকি সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও বাজার কারসাজিকারীদের শনাক্ত করেছেন, কিন্তু কমাতে পারছেন না ভোক্তার ভোগান্তি।
তবে লবণের বাজারে সিন্ডিকেট না থাকার দাবি করে ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘আমরা যে পরিমাণ লবণ চাচ্ছি, সে পরিমাণই সরবরাহ পাচ্ছি। লবণের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট হয়নি। সিন্ডিকেট হওয়ার বিষয়ে শোনাও যাচ্ছে না। কিন্তু অন্যান্য পণ্যের দাম সিন্ডিকেট করে বাড়ানো হয়েছে।’
এটি হয়তো সবারই জানা যে দেশে শিল্প ও ভোক্তা লবণের উৎপাদন থেকে ভোগ পর্যন্ত দেখভাল করার দায়িত্ব বিসিকের। সংস্থাটির লবণ সেল প্রধানের দফতর বলছে, চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন থেকে সরবরাহের প্রতিটি ধাপে, কার কাছে বা কোন প্রতিষ্ঠানে কতটুকু লবণ রয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য রয়েছে তাদের কাছে। যা দেখে বাজারকে নিরুত্তাপ রাখছে সংস্থাটি।
এ বিষয়ে বিসিক চেয়ারম্যান মুহ. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘লবণ আমদানি করার অনুমতি দেয়া হবে না’ আশ্বাস দিয়ে আমরা চাষিদের উৎসাহিত করি। আমরা তাদের বলি, ‘যদি আপনারা পর্যাপ্ত পরিমাণ লবণ সরবরাহ করেন বা উৎপাদন করেন, তাহলে আমদানি করা হবে না।’ তারা আমাদের কথা দেয়। আমরা তাদের এমনভাবে আশ্বস্ত করি যে তারা লবণ উৎপাদনে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
সংস্থাটির কাছে লবণের পূর্ণাঙ্গ তথ্য থাকার দাবি করে তিনি বলেন, ‘কোন নৌকা কতটুকু লবণ বহন করছে, কোন কৃষক কতটুকু লবণ উৎপাদন করছে ও কোন মিলারের কাছে কতটুকু লবণ মজুত আছে–এসব বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য আছে। আমরা সাধারণত বলি যে এখানে মধ্যস্বত্বভোগী নেই, তারপরও যদি থাকে, সেটিও আমরা খুঁজে বের করি। ব্যবসায়ী হিসেবে ধরে নিয়ে তাকেও আমরা উদ্বুদ্ধ করি, যে কোনোভাবে যেন মাটির নিচে লবণ লুকিয়ে না রাখা হয়। এর পরও যারা করেছে, আমরা তাদের তালিকা করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাদের এটিও বলেছি, যদি লবণের মূল্য বেড়ে যায়, তাহলে আমরা অন্যভাবে বিষয়টি বিবেচনা করব। এই অন্যভাবে বিবেচনা করার মধ্যে আবার কথা আছে, যা তারা ভালোভাবেই বোঝেন।’
ফলে লবণের মূল্য নিয়ে অস্থিরতা তৈরি হয় না দাবি করে বিসিকের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের উৎপাদনেরও সামর্থ্য রয়েছে। আর বাজারজাতেও কোনো সমস্যা নেই।’
লবণের বাজার উৎপাদন থেকে বাজারজাত পর্যপ্ত কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেণ, ‘লবণের মূল্য বৃদ্ধি পাবে আর বিসিক তখন মাঠে নেমে লবণের মূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবে, আমরা এটা কখনো করি না। আমরা শুরু থেকে সবকিছু মাথায় রেখেই কাজ করি, যেন কোনোভাবেই লবণের দাম না বাড়ে।’
এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সঠিক পরিসংখ্যান নিয়ে বিসিক যেভাবে লবণ নিয়ে বাজারবান্ধব কাজ করছে, তা যেন অন্য নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে উদাহরণ হয়।
অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর বলেন, বিসিক লবণের ক্ষেত্রে সরবরাহ ব্যবস্থায় একটি বাজারবান্ধব কাজ করছে। বাজারে অন্যান্য পণ্য, বিশেষ করে চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে লবণ একটি উদাহরণ হতে পারে।
তাই চিনিসহ যেকোনো পণ্যের বাজার সিন্ডিকেট ভাঙার ক্ষেত্রে বিসিকের এই কর্মকৌশলকে অনুসরণ করার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের।
অন্যদিকে সাধারণ ভোক্তারা বলছেন, লবণের মতোই সঠিক তথ্য-উপাত্তে ভরপুর থাকুক প্রতিটি নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থাপনা, যেন বাজারে অসঙ্গতির আশঙ্কা জাগলেই থামিয়ে দেয়া যায় অপশক্তির তৎপরতা।