সৌদি আরবে পারি জমিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। পাড়ি জমিয়েছেন করিম বেনজেমা। লিওনেল মেসি ও লুকা মদ্রিচও পেয়েছিলেন বড় ধরনের প্রস্তাব। সৌদি আরবের নজর এখন ইউরোপে খেলা বড় বড় তারকাদের ওপর। সৌদি আরব কি তবে ফুটবলের পাওয়ারহাউজ হিসেবে ইউরোপকে চ্যালেঞ্জ করতে চায়? -উঠছে এমন প্রশ্নও।
ফুটবলে সৌদি আরব যেভাবে ব্যয় করছে তাতে কি হুমকির মুখে ইউরোপের ক্লাব ফুটবল? এই প্রশ্ন যখন দানা বাঁধছে তখন উয়েফা সভাপতি অ্যালেক্সান্ডার সেফেরিন আশ্বস্ত করছেন ফুটবলের পাওয়ারহাউজ খ্যাত ইউরোপের ক্লাবগুলোকে। সৌদি আরবের বিপুল অর্থ ব্যয় নিয়ে ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর ভয় পাওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তার মতে, ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে থাকা তারকা ফুটবলারদের পেছনে এতো বিপুল অর্থ ব্যয় করে ভুল করছে দেশটি।
গত ডিসেম্বরে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে দিয়ে শুরু। সৌদি ক্লাব আল নাসর বছরে ২০০ মিলিয়ন ইউরোর আশেপাশে পারিশ্রমিকে যোগ দেন। আর চলতি মাসেই করিম বেনজেমাও বছরে ১০০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি পারিশ্রমিকে যোগ দেন আল ইত্তিহাদে। মেসি ও লুকা মদ্রিচও পেয়েছেন বড় অংকের প্রস্তাব। যদিও তারা সে প্রস্তাব মেনে রাজি হননি। ২০০৮ সালের পর থেকে এই চারজনই ভাগাভাগি করে নিয়েছেন সবগুলো ব্যালন ডি’অর। তাই তাদের ইউরোপ থেকে ভাগিয়ে সৌদি আরবে নেওয়ার এই প্রচেষ্টা অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ।
শুধু তারাই নয়, ইউরোপের আরও কয়েকজন শীর্ষ তারকা মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে যাচ্ছেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। মূলত দেশটির পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ) থেকে ক্লাবগুলোর পেছনে এই বিপুল অর্থ ঢালা হচ্ছে। পিআইএফের চেয়ারম্যান সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।
উয়েফা নেশনস কাপের ফাইনাল উপলক্ষে উয়েফার সভাপতি সেফেরিন ছিলেন নেদারল্যান্ডসে। রোববার (১৮ জুন) তাকে জিজ্ঞাস করা হয়েছিল, ইউরোপ থেকে খেলোয়াড়দের সৌদিমুখী হওয়ায় উয়েফার ভীত হওয়ার কারণ আছে কি না?
নেদারল্যান্ডসের সরকারি সম্প্রচার সংস্থা এনওএসের এ প্রশ্নের উত্তরে সে সম্ভাবনা তিনি সরাসরি নাকচ করে দেন।
কেন ভীত নন, তার ব্যাখ্যা হিসেবে সেফেরিন বলেন, ‘আমি মনে করি, এটা সৌদি আরবের ফুটবলের ভুল। এটা তাদের জন্য কীভাবে সমস্যা জানেন? কারণ, তাদের এখন একাডেমিতে বিনিয়োগ করা উচিত, কোচ আনা উচিত, উচিত নিজেদের খেলোয়াড় তৈরি করা। যেসব খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ার শেষ প্রান্তে, তাদের কিনে ফুটবল কাঠামোর উন্নতি করা যাবে না। এই ভুল চীনও করেছিল, শেষবেলায় থাকা খেলোয়াড়দের কিনেছিল যখন।’
২০১২ সালে চাইনিজ লিগে ঠিক একইভাবে ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় তারকাদের দলে ভেড়ানো হয়েছিল। এই তালিকায় দিদিয়ের দ্রগবা, নিকলাস আনেলকা, অস্কারের মতো তারকারা। তবে তাতে খুব একটা লাভ হয়নি চীনের। নামী খেলোয়াড়দের দলে টেনেও লিগ বা জাতীয় দল কোনটারই গুণগতমানের উন্নতি করতে পারেনি তারা।
সেফেরিন মনে করেন একই পথে হাঁটছে সৌদি লিগও। ইউরোপে সেরা সময় পার করে ফেলা খেলোয়াড়দেরই সৌদি কিনছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সেফেরিন বলেন, ‘সেখানে যাওয়া একজন শীর্ষ খেলোয়াড়ের নাম বলেন তো আমাকে, যার বয়স বেশি নয় কিংবা ক্যারিয়ার কেবল শুরু হয়েছে। এখানে (ইউরোপে) টাকাটাই সব নয়। ফুটবলাররা সেরা প্রতিযোগিতায় খেলতে চায়, সেরা প্রতিযোগিতায় জিততে চায়।’
তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, সৌদির কারণে দর্শক আকর্ষণ করে এমন খেলোয়াড়দের হারিয়ে ফেলছে কিনা ইউরোপ? – এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কাউকে হারিয়ে ফেলিনি। ওরা এখনো ফুটবল খেলছে। ক্যারিয়ারের শেষবেলায় কিছু খেলোয়াড় অন্যত্র গিয়ে কিছু অর্থ আয়ের চেষ্টা করেই থাকে।’