Homeজেলাঘটনার সময়ে সৌদিআরবে হজ্বে থেকেও নড়িয়া থানায় মামলার আসামী যুবদল নেতা

ঘটনার সময়ে সৌদিআরবে হজ্বে থেকেও নড়িয়া থানায় মামলার আসামী যুবদল নেতা

মেহেদী হাসান, শরীয়তপুর প্রতিনিধি ॥

ঘটনার সময় হজ¦ব্রত পালন করার লক্ষ্যে সৌদীআরবে অবস্থান করা সত্ত্বেও শরীয়তপুরে নড়িয়া থানায় একটি মানবপাচার মামলায় আসামী করা হয়েছে নড়িয়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান সাগরকে। মামলার বাদী নড়িয়া উপজেলার জপসা গ্রামের হাবি ঢালীর পুত্র আরিফ ঢালী বলেন, যুবদল নেতা মতিউর রহমান সাগরকে এজাহারে আসামী করা হয়নি এবং তাকে আমি চিনি না, তাছাড়া এ ঘটনার সাথে সে জড়িত নয়, একজন নিরপরাধ লোককে কেন হয়রানি করবো আমরা।

অথচ এ গায়েবি মামলায় মতিউর রহমান সাগর পুলিশের হাতে আটক হয়ে ৯দিন জেলহাজত খেটেছেন। এ ঘটনায় নড়িয়া থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সুশীল সমাজে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

নড়িয়া থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল নড়িয়া উপজেলার জপসা গ্রামের আরিফ ঢালী বাদী হয়ে শরীয়তপুরে আদালতে মানবপাচার দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামী করা হয় কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবের আনোয়ারা খাতুনসহ অজ্ঞাত আরো ৫/৬ জনকে। মামলাটি আদালতের নির্দেশে এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করে নড়িয়া থানা পুলিশ।

মামলার এজাহারে জানা যায়, ওই মামলার বাদী আরিফ ঢালীর কাছে গত বছরের ১৫ মার্চ একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে তখন তার ভাই বশিউর ঢালীর গলার শব্দ শুনতে পান। তিনি জানান কিছু লোক আমাকে বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে লিবিয়া নিয়ে আসছে। আমাকে তারা এখন বেধম মারপিট করেছে, আমাকে বাঁচাতে হলে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের আনোয়ারা খাতুনের ব্যাংক একাউন্টে ৩ লাখ টাকা পাঠাও। মামলা বাদী তখন ২০২২ সালের ২১ মার্চ ওই একাউন্টে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা পাঠায়। পরবর্তীতে ১ এপ্রিল আবারো তার ভাই ফোন করে জানায়, ওই আনোয়ারা খাতুনের একাউন্টে আরও ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাঠাতে হবে, অন্যথায় তারা বাদীর ভাইকে মেরে ফেলবে। ভাইকে বাঁচাতে ৫ এপ্রিল ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার রয়েল হোস্টেলের সামনে আনোয়ারা খাতুনের কাছে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেয় বাদী। কিন্ত তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি মামলার বাদী আরিফ ঢালীর লিবিয়া প্রবাসী ভাই বশিউর ঢালীর। সন্ত্রাসীরা ১৭ এপ্রিল তার ভাইকে হত্যা করে লিবিয়ায় বসবাসরত বাদীর চাচাতো ভাইর বাসার সামনে লাশ ফেলে রেখে গেছে।

ওই মামলায় নড়িয়া থানা পুলিশ ২৫ মে তারিখে সন্দেহভাজন আসামী হিসেবে নড়িয়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান সাগরকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায়। আদালতের নির্দেশে পরে ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। সিআইডি পুলিশের চার্জশিটে এজাহার নামীও আসামীদের সাথে অভিযুক্ত করা হয় মতিউর রহমান সাগরকে। যুবদল নেতা মতিউর রহমান সাগরের দাবী, ওই মামলার চার্জশিটে উল্লেখ করা ঘটনার তারিখের ২ দিন আগে তিনি সৌদি আরবে ওমরাহ হজ্বে অবস্থানরত ছিলেন।

তার পাসপোর্ট ও ভিসার কপিতে এ সংক্রান্ত সত্যতা পাওয়া গেছে। কিন্তু চার্জশিটে তাকে ৫ এপ্রিল ২০২২ইং ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় উপস্থিতি দেখানো হয়েছে। ৯দিন কারাভোগ শেষে আদালতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে বাদীর অনুরোধে ১জুন কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান মতিউর রহমান সাগর। মামলার বাদী আরিফ ঢালী বলেন, আমি মামলা দিছি আনোয়ারা খাতুনের নামে।

তার ছেলে আনোয়ার হোসেন লিবিয়া আমার ভাইকে জিম্মি করে তার মায়ের একাউন্টে টাকা নিছে। তাই তার মাকে আসামী দিছি। এ ঘটনায় শরীয়তপুরের কেউ জড়িত নেই। তারপরও মতিউর রহমান সাগরকে কেন আসামী করা হয়েছে তা জানি না। তাকে কখনো দেখি নাই, চিনিও না। তাই নিরপরাধ এই মানুষটিকে হয়রানি থেকে বাঁচাতে আদালতে এসে বিচারকের সামনে বলেছি। নড়িয়া থানার ওসি তদন্ত আবির হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক মানবপাচারে সন্দেহজনকভাবে তাকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছি। এই মামলা তদন্ত করছে সিআইডি। আপনারা সিআইডির কাছ থেকে জানেন সে জড়িত আছে কি না? তদন্তকর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের উপ-পরিদর্শক মজিবুর রহমান বলেন, তাকে নড়িয়া থানা কেনো গ্রেফতার করছে তা আমি জানি না।

সর্বশেষ খবর