মেহেদী হাসান, শরীয়তপুর প্রতিনিধি ॥
শরীয়তপুরে গোসাইরহাট উপজেলার ১০৩ নং আনুয়াকাটি মৌজার বিআরএস ১ নং খাস খতিয়ানের ৭৬ ও ৭৭ নং দাগের প্রায় ৩০ একর সরকারি খাস জমি দখল করে রেখেছেন ওই গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বেপারীর পুত্র উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এজাজ আল মাহমুদ সুমন ও তার ভাইয়েরা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওই জমির আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৭ কোটি টাকা। নদী সিকস্তির সরকারি এই বিশাল খাস জমি দখল করে তারা ঘরবাড়ি নির্মাণসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে দখল করে রেখেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাস জমি উদ্ধারের কোন তৎপরতা নেই বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
গোসাইরহাট ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও স্থানীয় মোহন মেম্বার, মতিউর রহমান ঢালী, আলাউদ্দিন সিপাই, মরিজুল গাজীসহ অনেকে জানান, ১০৩ নং আনুয়াকাটি মৌজার এসএ ২, ৩, ৪ নং খতিয়ানের যা পরবর্তিতে বিআরএস ১ নং খাস খতিয়ানের ৭৬ ও ৭৭ নং দাগের প্রায় ৩০ একর জমি নদী সিকস্তির মাধ্যমে সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। কয়েক বছর আগে নদীর পাশর্^বর্তী জায়গার মালিক আলাউদ্দিন সিপাই, মরিজুল গাজী, শাহজাহান ঢালী, বিল্লাল ঢালী, ওসমান ঢালী, কালা খান, আবু সরদার, শাহ আলম মোল্লা, বাচ্চু মোল্লা, নিরব মালত, কালু মোল্লা গংরা ওই জমি ভোগদখল করে আসছিল।
তারা অভিযেগ করেন, সম্প্রতি ওই জমি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত হওয়ার পর নানা অপকর্মের হোতা স্থানীয় সুচতুর গোসাইরহাট উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এজাজ আল মাহমুদ সুমন প্রভাব খাটিয়ে ওই সকল মালিকদেরকে সরিয়ে দিয়ে তিনি ও তার ভাইয়েরা জমির উপর স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেন।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এজাজ আল মাহমুদ ওই খাস জমিতে ভূয়া মালিকানা দেখিয়ে জমিতে কৃষি কাজের সেচের জন্য উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ২টি সেচ মেশিন ও ধান মাড়াইয়ের ২টি বোঙ্গা বরাদ্দ করান এবং পরবর্তীতে তা বিক্রি করে তিনি সমুদয় টাকা পকেটস্ত করেছেন বলেও স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। বর্তমানে ওই সরকারি খাস জমি দখল করে এজাজ আল মাহমুদ ও তার ভাইয়েরা একের পর এক ঘরবাড়ি তৈরিসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রেখেছেন। এজাজ আল মাহমুদ জমির মালিকানা দাবি করে প্রতারণার মাধ্যমে নামে বেনামে অন্য লোকের কাছে কিছু জমি বিক্রিও করেছেন।
তবে সেক্ষেত্রে বিক্রিত জমি সরকারের বিধায় ক্রেতাকে দলিল করে দিতে পারেনি তিনি। স্থানীয় মতিউর রহমান ঢালী জানান, এজাজ আল মাহমুদ প্রতারণার মাধ্যমে আমার নিকট ২ একর জমি বিক্রি করেছেন। পরে শুনি এই জমি সরকারের খাস জমি। এখন তিনি জমির দলিলও করে দিচ্ছেন না আর টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না। এদিকে জমিতে ভ্যেকু দিয়ে বিশাল মৎস্য প্রকল্প তৈরি করছেন তারা।
সম্প্রতি সরকারি এই খাস জমিতে ভ্যেকু দিয়ে মাটি কাটার অপরাধে এজাজা আল মাহমুদের ভাই শাহাদাত হোসেনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রম্মমাণ আদালত। গোসাইরহাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুজন দাশগুপ্ত বলেন, নদী শ্রেণির জমি ভ্যেকু দিয়ে কাটার অভিযোগে শাহাদাত হোসেন নামে একজনকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর (১৫)ধারা অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকা অর্থদ- ও অনাদায়ে ১মাসের কারাদ- দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের খাস জমি রক্ষা করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
সরকারি খাস জমি দখলকারী এজাজ আল মাহমুদ সুমন মোবাইল ফোনে বলেন, ১২ একর ৮০ শতাংশ জমি ১৯৯৪ সালে সরকার থেকে নিলাম খরিদসূত্রে আমরা মালিক। আমার মা ও বাবা ওই জমির মালিক। বিআরএস জরিপে সরকারের ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বিআরএস জরিপের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি। তবে স্থানীয় লোকজন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মামলার রায় সরকারের পক্ষে হয়েছে।