পাবনার ভাঙ্গুড়ায় গুমানি নদীর ওপর সেতু না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেলসেতু দিয়ে পারাপার হচ্ছেন কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ তিন উপজেলার হাজারো মানুষ। এতে গেল দুই যুগে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২শর বেশি মানুষ। স্থানীয়রা নদীটির ওপর সেতু নির্মাণের দাবি করে আসলেও উপেক্ষিত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
স্থানীয়রা জানান, নদীর পশ্চিম পাড়ে উপজেলা সদরসহ কয়েক গ্রাম, পূর্ব পাড়ের কমপক্ষে ৮টি গ্রাম, পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর উপজেলার এরশাদনগর ও চাচকিয়া এবং সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেয়া নৌকায় করে অথবা রেলসেতু দিয়ে নদী পারাপার করতে হচ্ছে।
বিশেষ করে রেলসেতু দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই অনেকে শিকার হন দুর্ঘটনার। রেলসেতু দিয়ে চলার সময় ট্রেন চলে এলে জীবন বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণহানিও ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, নদীর দুই পাড়েই রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নদী পার হতে হয়। এছাড়া নদীর অপর পাড়ে উৎপাদিত ফসল নিয়েও ভোগান্তিতে পড়তে হয় স্থানীয়দের।
সম্প্রতি কচুরিপানার কারণে নদীতে সমস্যা দেখা দিয়েছে নৌকা চলাচলে। এতে ভোগান্তি আরও বেড়েছে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রেলসেতু দিয়ে নদী পারাপারে গত দুই যুগে ট্রেনে কাটা পড়ে ২শর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
নানা ভোগান্তির কথা জানিয়ে রতন হোসেন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা সময় সংবাদকে বলেন, সেতু না থাকায় রেলসেতু দিয়ে শতশত মানুষ নদী পারাপার হয়। অনেকে এপার থেকে ওপারে জমির ফসল নিয়ে যায় রেলসেতু দিয়ে। ঝুঁকিপূর্ণ এ পারাপারে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।
তিনিও দাবি করেন, ওই রেলসেতু দিয়ে নদী পার হতে গিয়ে গত দুই যুগে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ গেছে দুই শতাধিক নারী-পুরুষের।
আলিফ হোসেন নামে স্থানীয় এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা অনেক সময় নদী পারাপারের সময় নৌকা পাই না। এ কারণে স্কুলের দেরি হয়ে যায়। তাই সঠিক সময় স্কুলে যাওয়ার জন্য আমরা রেলসেতু দিয়েই পার হই৷ রেললাইন দিয়ে যেতে যেতে ট্রেন চলে এলে অনেক সময় আমাদের নদীতে ঝাঁপ দিতে হয়। এখানে যদি একটা সেতু হতো তাহলে সবার উপকার হতো।’
স্থানীয় বাসিন্দা শাহীন হোসেন জানান, আগে নৌকায় পারাপার হওয়া যেতো; কিন্তু এখন নদীতে কচুরিপানা হওয়ায় নৌকা চলাচল করতে পারছে না। এ কারণে এখন রেলসেতু দিয়ে বেশিরভাগ মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার করতে হচ্ছে।
ভাঙ্গুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক টুটুন বলেন, ‘আমাদের এলাকার মানুষ নদী পারাপারে অনেক ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। সেতু না থাকায় এ পর্যন্ত অনেক মানুষের প্রাণ গেছে। এছাড়া স্থানীয় কৃষকরাও সেতু না থাকায় পণ্য পরিবহনে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।’
দ্রুততম সময়ে গুমানি নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
ভাঙ্গুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাকে বিল্লাহ জানান, ওই রেলসেতুতে অনেক প্রাণহানি হয়েছে। সবাই এক নামে ওই ব্রিজটিকে চেনে। গত দুই যুগে ২শর বেশি লোকের প্রাণ গেছে ওই রেলসেতুতে। মৃত্যুর মিছিল ঠেকানোর জন্য দ্রুত একটি সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।