জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি অভিযোগ করেছেন, ভারত, নাইজেরিয়া ও তুরস্ক টুইটার বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল। এই তিনটি দেশের সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কিছু অ্যাকাউন্টের ওপর কড়াকড়ি আরোপে তাদের নির্দেশনা না মানলে টুইটার বন্ধ করে দেয়া হবে।
সহপ্রতিষ্ঠাতার পাশাপাশি ডরসি টুইটারের প্রধান নির্বাহী ছিলন। ২০২১ সালে পদত্যাগ করেন তিনি। সোমবার (১২ জুন) ইউটিউবে প্রচারিত সংবাদভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘ব্রেকিং পয়েন্টস’-কে একটি সাক্ষাৎকার দেন ডরসি। ওই সাক্ষাৎকারের এসব অভিযোগ করেন তিনি।
ডরসি দাবি করেন, ভারতে ২০২০ ও ২০২১ সালে যে কৃষক বিক্ষোভ হয়েছিল, ওই বিক্ষোভকালে সরকারের সমালোচনা করে যারা পোস্ট দিয়েছিল সেগুলো সরাতে ও অ্যাকাউন্টগুলোর ওপর কড়াকড়ি আরোপের অনুরোধ জানিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার। তা না মানলে ভারতে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ারও হুমকি দেয়া হয়েছিল।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালানোরও হুমকি দেয়া হয়েছিল বলে জানান ডরসি। তবে মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার বরাবরই অনলাইন মাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। ডোরসির অভিযোগটিও অস্বীকার করেছে সরকার। বলা হয়েছে, ডোরসির বক্তব্যটি ‘ডাহা মিথ্যা’।
ভারতের তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রাজিব চন্দ্রশেখর এক টুইটার পোস্টে লিখেছেন, ‘কাউকে জেলে পাঠানো হয়নি, টুইটারও বন্ধ হয়নি। ডরসির নেতৃত্বে টুইটার ভারতীয় আইনের সার্বভৌমত্ব মেনে নিতে পারত না।’
কৃষি আইনে সংস্কার আনার দাবি জানিয়ে ভারতের কৃষকেরা ওই বিক্ষোভ করেছিল। এক বছর ধরে চলা ওই বিক্ষোভ ছিল মোদি সরকার ও তার দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরুদ্ধে হওয়া সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ।
২০২১ সালের শেষের দিকে কৃষকেরা বিক্ষোভ বন্ধ করেন। ডরসি বলেন, কৃষক বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ভারত সরকার তাদের সমালোচনাকারী কতিপয় সাংবাদিকদের নিয়ে আমাদের কাছে অনেক অনুরোধ জানিয়েছিল। তবে ভারত সরকারের দাবি, তারা শুধু শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নকারী ভুয়া তথ্য এবং পোস্টগুলো থামাতে চেয়েছিল।
বিক্ষোভ চলার সময় চালু হওয়া ‘মোদি প্ল্যানিং ফারমার জেনোসাইড’ হ্যাশট্যাগটি জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ করে দেয়ার অনুরোধ করেছিল ভারত সরকার। বেশ কয়েকটি টুইটার অ্যাকাউন্টও বন্ধ করে দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছিল।
টুইটার প্রাথমিকভাবে অনুরোধটি রাখলেও পরবর্তী সময়ে বেশির ভাগ অ্যাকাউন্ট পুনর্বহাল করা হয়। তখন টুইটারের পক্ষ থেকে বলা হয়, অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করে রাখার মতো ‘যথেষ্ট যৌক্তিকতা’ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তুরস্ক ও নাইজেরিয়ার সরকার একই ধরনের চাপ দিয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন ডরসি। এ দুই দেশের বিভিন্ন জায়গায় টুইটারের ওপর কয়েক বছর নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল।