সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) পাড়ি দিচ্ছেন লিওনেল মেসি। তবে তার ইচ্ছে ছিল, পুরোনো ডেরা বার্সেলোনায় ফিরে যাওয়ার। কিন্তু দুবছর আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তির ভয়, ক্লাবের কিছু মানুষের আপত্তি, আর খেলোয়াড়দের বেতন কমানোসহ নানা জটিলতায় তিনি পিছপা হয়েছেন বলে জানিয়েছেন, মুন্দো দেপোর্তিভোকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে।
আল-হিলাল, ইন্টার মায়ামি, নাকি বার্সেলোনা – কোথায় পাড়ি দিচ্ছেন মেসি? গত কয়েক দিন এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ ছিল না। শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টাইন তারকা বেছে নিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব মায়ামিকে। বুধবার (৭ জুন) মুন্দো দেপোর্তিভোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মেসি বলেন, ‘আমি মায়ামিতে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখনও চুক্তির সব কাজ শতভাগ সারতে পারিনি। কিছু বিষয় বাকি আছে। তবে আমরা এই লক্ষ্যে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
মায়ামিকে শেষ পর্যন্ত বেছে নিলেও, মেসির ইচ্ছে ছিল পুরোনো ডেরায় ফেরার। যেখানে তিনি হয়ে ওঠেছিলেন ফুটবল জাদুকর। অতিবাহিত করেছেন দেড় যুগ। হয়ে ওঠেছিলেন বার্সার প্রাণভোমরা। কিন্তু দুবছর আগে তার সঙ্গে যা ঘটেছে, তাতে তিনি নতুন করে ভরসা পাননি।
মেসি বলেন, ‘সত্যি বলতে আমি বার্সেলোনায় ফিরতে চেয়েছিলাম। আমার সে স্বপ্ন ছিল। কিন্তু দুবছর আগে যেটা ঘটেছে, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমি চাইনি। আমার খুব ভালো করে ২০২১ সালের আগস্টের কথা মনে আছে। অন্য কারো হাতে আমার ভবিষ্যৎ ছেড়ে দিতে চাইনি। আমি নিজে এবং পরিবারের কথা চিন্তা করে, নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলাম।’
বার্সেলোনা শুরু থেকেই বলে আসছিল, ক্লাবে ফেরার বিষয়টি ৯৯ ভাগই মেসির ওপর নির্ভর করছে। তবে আর্জেন্টাইন তারকা বলছেন, ক্যাম্প ন্যু থেকে তিনি আশানুরূপ সাড়াও পাননি। তার ওপর তাকে দলে ভেড়াতে বার্সাকে আরও অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করতে হতো। শেষ পর্যন্ত তিনি ফিরতে পারতেন কিনা সেটারও ছিল না নিশ্চয়তা।
মেসি বলেন, ‘চুক্তির বিষয়ে বার্সেলোনার সঙ্গে আমাদের কোনো আলোচনা হয়নি। তারা আমাকে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিল; কিন্তু সেটা আনুষ্ঠানিক ছিল না। লিখিত বা স্বাক্ষর করা নয়। বেতন নিয়ে আমাদের কোনো আলোচনা হয়নি। এটা অর্থের বিষয় ছিল না। যদি হতো তাহলে আমি সৌদিতে যেতাম।’
‘আমি শুনেছি, লা লিগা সবুজ সংকেত দিয়েছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, বার্সায় ফিরতে হলে আরও অনেক কাজ বাকি ছিল। ক্লাবকে খেলোয়াড় বিক্রি করতে হবে বা খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক কমাতে হবে। সত্যি বলতে, আমি এই বিষয়গুলোর মধ্যদিয়ে যেতে চাইনি, কিংবা এইসব কিছুর দায় নিতে চাইনি।’
দুবছর আগে কীভাবে তাকে ক্লাব ছাড়তে হয়েছিল সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মেসি বলেন, ‘এটা খুবই বাজে পরিস্থিতি ছিল। সবকিছুই ঠিক ছিল। হঠাৎ রাতারাতি সিদ্ধান্ত বদলে গেল। তারা আমাকে জানাল, এটা সম্ভব নয়। আমাকে ক্লাব ছাড়তে হবে। আমাকে দল খুঁজতে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছিল এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। ওই সময়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে গিয়েছি। একই রকম অবস্থার মধ্যদিয়ে আবার যেতে চাই না।’
মেসি অভিযোগ করেন, ক্লাবে এমন কিছু মানুষ আছেন যারা চান না তিনি বার্সেলোনায় ফিরে যান।
বিশ্বকাপজয়ী বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, ক্লাবে এমন কিছু মানুষ আছে, যারা আমি বার্সায় ফিরি, সেটা চায় না। তারা মনে করে, সেটা ক্লাবের জন্যই ক্ষতিকর।’
২০২১ সালে বার্সা ছাড়ার সময় মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারেননি মেসি। কোভিড-১৯-এর বাধ্যবাধকতার কারণে তাকে একটি কক্ষে সংবাদসম্মেলন করে বিদায় জানাতে হয়েছিল। তার ইচ্ছে ছিল, ক্যাম্প ন্যুতে হাজার হাজার কাতালান সমর্থকের কাছ থেকে হৃদয়সিক্ত ভালোবাসা নেয়ার, যারা মেসি, মেসি উচ্চ ধ্বনিতে বার্সেলোনার আকাশা-বাতাস ভারি করে তুলবে। বার্সেলোনায় ফিরে গিয়ে সমর্থকদের কাছ থেকে এভাবেই বিদায় নেয়ার ইচ্ছে ছিল আর্জেন্টাইন তারকার।
তিনি বলেন, ‘বার্সার সমর্থকরা ক্যাম্প ন্যুতে ইনিয়েস্তা, বুসকেটস, জর্দি আলবা, জাভিদের মতো আমার নামও উচ্চারণ করবে, বিদায় জানাবে, এমনটা আমি চেয়েছিলাম। এটা অন্যরকম একটা অনুভূতি। কিন্তু আমি সেখানে এখন নেই।’
নানা সীমাবদ্ধতার কারণে দ্বিতীয়বার বার্সায় ফেরা হলো না মেসির। আপাতত তাঁবু গাড়বেন যুক্তরাষ্ট্রে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে বার্সেলোনাতেই থাকার ইচ্ছে তার। কাছাকাছি থেকে ভালোবাসার ক্লাবের জন্য ভবিষ্যতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চান তিনি।
মেসি বলেন, ‘আমি বার্সার কাছাকাছি থাকতেই পছন্দ করব। এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি বার্সেলোনাতেই আবার থাকব। আশা রাখি, একদিন ক্লাবকে সহযোগিতা করার। কারণ আমি এই ক্লাবকে ভালোবাসি। আমি বার্সার সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই তাদের সমর্থনের জন্য। এবং হ্যাঁ, আমি অবশ্যই আবার এখানে থাকতে চাই।’
২০০০ সালে আর্জেন্টিনা থেকে বার্সেলোনায় পাড়ি দিয়েছিলেন মেসি। ২০২৩ সালে পিএসজি ছাড়ার মাধ্যমে শেষ হয়েছে তার ইউরোপ যাত্রা। এবার মেসি আলো ছড়াবেন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে।