কুয়েতে আরও একবার পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে আবারও ভোট দিচ্ছে দেশটির জনগণ। গত কয়েক বছর ধরেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা যেন পিছু ছাড়ছে না আরব দেশটির। রাজনৈতিক অচলাবস্থার জেরে গত মাসে পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেয়া হয়। ঘোষণা করা হয় আগাম নির্বাচন।
আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, মঙ্গলবার (৬ জুন) সকাল ৮টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টায়) ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার কথা রাত ৮টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায়)। বুধবার (৭ জুন) ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন কুয়েতি কর্মকর্তারা।
কুয়েতের আয়তন মাত্র ১৭ হাজার ৮১৪ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ৪২ লাখের কিছু বেশি। ১৯৬২ সালে মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসেবে কুয়েতে নির্বাচনভিত্তিক পার্লামেন্টারি শাসন ব্যবস্থা চালু হয়।
গত ১০ বছরে এ নিয়ে সপ্তমবারের মত পার্লামেন্ট নির্বাচন হচ্ছে দেশটিতে। কুয়েতের পার্লামেন্টে মোট আসন সংখ্যা ৭৬টি। এসব আসনের মধ্যে ৫০টি নির্বাচিত এমপিদের জন্য। বাকি ১৬টি আসনের এমপিরা নিয়োগ পান আমিরের সুপারিশে।
স্থনীয় গণমাধ্যমের তথ্য মতে, আগের তুলনায় এবার প্রার্থীর সংখ্যা কম। ১৩ জন নারীসহ মোট ২০৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যা ১৯৯৬ সালের পর সর্বনিম্ন। মোট ভোটার রয়েছে সাত লাখ ৯৩ হাজার ৬৪৬ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার চার লাখ ছয় হাজার ৮৯৫ জন। পুরুষ ভোটারের সংখ্যা তিন লাখ ৮৬ হাজার ৭৫১ জন।
২০২০ সালের নির্বাচনের পর থেকে দেশটির পার্লামেন্টের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয় নির্বাহী বিভাগ তথা আমিরের। সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে নিজেদের অংশগ্রহণের পরিধি আরও বিস্তৃত করতে চান পার্লামেন্ট সদস্যরা। তা থেকেই এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত।
নির্বাচনভিত্তিক পার্লামেন্টারি ব্যবস্থা থাকলেও কুয়েতের রাজনীতি মূলত নিয়ন্ত্রণ করে আল সাবাহ পরিবার। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোও এই পরিবারের সদস্যদের জন্যই বরাদ্দ থাকে। মূলত কুয়েতের যাবতীয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের মূল কারণ এটাই।
সরকার ও পার্লামেন্ট দ্বন্দ্ব এড়াতে কুয়েতের আমির বা শাসনতান্ত্রিক প্রধান শেখ নাওয়াফ আল আহমেদ আল সাবাহ ২০২১ সালে নিজের জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ মেশাল আল আহমেদ আল সাবাহকে কুয়েতের ক্রাউন প্রিন্স তথা যুবরাজ ঘোষণা করেন ও রাষ্ট্র পরিচালনা সংক্রান্ত অধিকাংশ দায়িত্ব তার ওপর অর্পণ করেন। তা সত্ত্বেও পার্লামেন্ট ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে সম্পর্কে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
এই পরিস্থিতিতে ২০২২ সালে স্পিকার মারজুক আল ঘানিম পার্লামেন্টের বিলুপ্তি ঘোষণা করেন। সেপ্টেম্বরে দেশটিতে একটি জাতীয় নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান পার্লামেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধির পক্ষে অবস্থান নেন এমপিরা। তবে কুয়েতের সাংবিধানিক আদালত সেই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে পূর্বের পার্লামেন্টই বহাল রাখে।
পার্লামেন্টারি ব্যবস্থা থাকলেও কুয়েতে কোনো রাজনৈতিক দল নেই। সংবিধানে রাজনৈতিক দল গঠন নিষিদ্ধ। যারা সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী হন, তাদের প্রায় সবাই দেশটির অভিজাত সম্প্রদায়ের; যাদের একটি অংশ আবার আমিরবিরোধী।