২০২০ সালে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে ওপারে পাড়ি জমিয়েছেন ফুটবল কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা। ফুটবলের সবচেয়ে বর্ণিল চরিত্রের অধিকারী এই কিংবদন্তি ফুটবলার খেলোয়াড়ি জীবন শেষ করার পরও ছাড়তে পারেননি ফুটবলের মায়া। তাই সুযোগ পেলেই ছুটে যেতেন মাঠে। শিশুসুলভ উল্লাসে ফেটে পড়তেন প্রিয় দলের জয়ে। দলের হারে গ্যালারিতে খুঁজে পাওয়া যেত ম্যারাডোনার বিষাদমাখা মুখখানি।
ম্যারাডোনা এখন জীবিত থাকলে হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ হতেন। আর্জেন্টিনার ফুটবল জার্সিটা যে বড্ড ভালোবাসতেন। সেই দলটা যে তার অবসরের পর আর সাফল্যের দেখাই পাচ্ছিল না। বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্ট হলে আর সেখানে আর্জেন্টিনা থাকলেই গ্যালারি মাতাতে হাজির হতেন ম্যারাডোনা। এক বুক আশা নিয়ে হাজির হলেও প্রতিবার বিদায় নিতেন কান্নায় ভেজা চোখ নিয়ে। জীবদ্দশায় আর প্রিয় দলের শিরোপা উল্লাস দেখার সুযোগ পাননি তিনি।
তবে ম্যারাডোনা হয়তো এখনও ওপারে বসে উদ্যাপন করছেন ৩৬ বছর পর আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের ক্ষণটা। টাইব্রেকারে গঞ্জালো মন্টিয়েলের নেয়া শেষ শটটা হুগো লরিসকে পরাস্ত করতেই হয়তো বাঁধভাঙা উল্লাসে ভেসে গেছেন। ক্যারিয়ার শেষের আগে লিওনেল মেসি পূর্বসূরিকে সেরা উপহারটাই দিলেন।
৩৬ বছর পর লিওনেল মেসির হাত ধরে ফের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে আর্জেন্টিনা। ছবি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
তবে শুধু আর্জেন্টিনা দলই নয়, সুসময় কাটাচ্ছে ডিয়েগো ম্যারাডোনার স্মৃতিধন্য ক্লাবগুলোও। ম্যারাডোনা মানে যেমন ছিয়াশির বিশ্বকাপের আর্জেন্টিনা, তেমনই ম্যারাডোনা মানে নাপোলি। ইতালির নেপলস শহরের ‘ঈশ্বর’ পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি উচ্চতার ঝাঁকড়া চুলের জাদুকর। অখ্যাত ক্লাবটিকে ইতালির রাজা বানিয়ে শহরটির মানুষের অন্তরে চিরকালীন প্রেম হয়ে টিকে আছেন এই আর্জেন্টাইন। দুবার ক্লাবটিকে জেতান সিরি আ’র শিরোপা, জেতান একমাত্র ইউরোপিয়ান কাপের শিরোপাটাও।
ম্যারাডোনা ক্লাব ছেড়ে বিদায় নেয়ার পর আর কখনো লিগ শিরোপা জেতা হয়নি ক্লাবটির। অবশেষে চলতি মৌসুমে ৩৩ বছর পর ফের সিরি আ’র শিরোপা জিতেছে নাপলি। লিগে রীতিমতো দাপট দেখিয়ে শিরোপা জিতে নিয়েছে ম্যারাডোনার সাবেক ক্লাব। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাৎসিওর চেয়ে এ মুহূর্তে ১৬ পয়েন্ট এগিয়ে থাকাটাই বলে দেয় ঠিক কতটা দাপট দেখিয়েছে তারা।
নাপোলিতে খেলার আগে ম্যারাডোনা ১৯৮২-৮৪ পর্যন্ত খেলেছেন লা লিগার ক্লাব বার্সেলোনায়। ২০১৯ সালের পর লিগ জিততে পারছিল না তারাও। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয় ও নাপোলির লিগ শিরোপা জয়ের মৌসুমেই ফের লা লিগার শিরোপা জিতেছে বার্সেলোনাও। নাপোলির মতোই দাপট দেখিয়ে লিগ জিতেছে কাতালান ক্লাবটি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে তাদের পয়েন্ট ব্যবধান ১১!
নাপোলি আর বার্সেলোনার সাফল্যের দিনে ম্যারাডোনার অন্য সাবেক দুই ক্লাব বোকা জুনিয়র্স ও সেভিয়াও-বা বসে থাকবে কেন! ২০২২ সালে আর্জেন্টাইন প্রিমেরা ডিভিশন লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বোকা আর সদ্যই ইউরোপা লিগ চ্যাম্পিয়ন হলো লা লিগার ক্লাব সেভিয়া। এই দুই ক্লাবের হয়েই স্বল্প সময়ের জন্য খেলেছেন এই কিংবদন্তি। ১৯৮১-৮২ পর্যন্ত ৪০ ম্যাচে ২৮ গোল করেছেন ম্যারাডোনা। পরে ক্যারিয়ার সায়াহ্নে ১৯৯৫ সালে ফের বোকায় ফেরেন ম্যারাডোনা এবং সেখানেই ১৯৯৭ সালে ক্যারিয়ার শেষ করেন। এ দফায় ৩০ ম্যাচে ৭ গোল করেন তিনি।
অন্যদিকে সেভিয়ার হয়ে ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে ২৬ ম্যাচে ৫ গোল করেন তিনি। বুধবার (৩১ মে) ইউরোপা লিগের ফাইনালে রোমাকে টাইব্রেকারে ৪-১ গোলে হারায় সেভিয়া।