তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের সংস্কারের নামে সাড়ে ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যানেলের দুই ধারে বিভিন্ন প্রজাতির চার লাখের বেশি গাছ কাটা শুরু করছে বন বিভাগ। যদিও খালগুলোর সংস্কার শেষে দু-এক বছরের মধ্যে নতুন করে গাছ লাগানো হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্প সংস্কারের দোহাই দিয়ে প্রধান খালপাড়ের কেটে ফেলা গাছ। ছবি: সময় সংবাদ
প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নীলফামারী, দিনাজপুর ও রংপুর জেলার ১২টি উপজেলায় বিস্তৃত তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের প্রধান খাল, টারশিয়ারি খাল, সেকেন্ডারি খালসহ সাড়ে ৭০০ কিলোমিটার খালের দুই পাড়ের সারি সারি গাছ একের পর এক কেটে ফেলা হচ্ছে। যার সংখ্যা ৪ লাখের বেশি। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে ক্যানেলের ধারে ধারে।
১৮ থেকে ২০ বছর ধরে বন বিভাগের সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির অধীন স্থানীয় নারী-পুরুষেরা দেখভাল করে গাছগুলো বড় করে তুলেছিলেন। নীতিমালা অনুযায়ী এসব গাছ পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হওয়ার পর কাটার কথা। আর নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে ৫৫ শতাংশ অর্থ পাওয়ার কথা পরিচর্যাকারীর। ২০ শতাংশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। বাকি ২৫ শতাংশ যাবে সরকারের বিভিন্ন দফতর ও খাতে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কিছুই তাদের জানানো হয়নি বলে অভিযোগ সুবিধাভোগীদের অনেকের।
নীলফামারী বন বিভাগ ও সামাজিক বনায়ন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যৌথভাবে হয়েছিল এ বনায়ন। নিয়ম মেনে সব পক্ষকে অবগত ও সম্পৃক্ত করে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গাছ কাটা শুরু হয়েছে। গাছ কাটা কার্যক্রম শেষ হলে সুবিধাভোগীরা তাদের ন্যায্য অর্থ পেয়ে যাবেন।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, প্রকল্প সংস্কার ও সম্প্রসারণের স্বার্থে গাছ কাটা হলেও ক্যানেলের কাজ শেষে এক থেকে দুই বছরের মধ্যে নতুন করে আবারও কয়েক গুণ বেশি গাছ লাগানো হবে। সৈয়দপুর ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, ‘নতুন করে বৃক্ষরোপণের জন্য বন বিভাগের সঙ্গে এমইউ স্বাক্ষর হয়ে গেছে।’
তবে পরিবেশবিদরা গণহারে এত সংখ্যক সংখ্যক গাছ কাটার বিপক্ষে মত দিয়ে বলছেন, এ ক্ষেত্রে সরকারি আইন মানা হচ্ছে না।
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, একটি গাছ কাটার আগে নতুন চারা রোপণ করতে হবে। সেই চারা বেড়ে ওঠার নিশ্চয়তা সৃষ্টি হলে তারপরই গাছ কাটা যাবে। একসঙ্গে ৪ লাখ গাছ কাটলে প্রকল্প এলাকার পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব অবশ্যই পড়বে। ৪ লাখ গাছ কেটে ডিপিপিতে ৭৮ হাজার গাছ প্রতিস্থাপনের উল্লেখ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
১ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা ব্যারেজ কমান্ড এরিয়া ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের অধীন প্রথমবারের মতো দেশের সবচেয়ে বড় এ সেচ প্রকল্পের সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে।