যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স্ক দেশের মাটিতে জন্ম নেয়া এবং দেশে ১৪ বছর থেকেছেন এমন যেকোনো নাগরিক প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হতে পারেন। তবে যৌন নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগ থাকায় দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বলা হচ্ছে, একাধিক মামলা থাকলেও ২০২৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের মনোয়ন পেতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ধর্ষণসহ একাধিক মামলার আসামি হলেও ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করার পথে কোন সাংবিধানিক বাধা নেই। তবে এজন্য তাকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে নিউ ইয়র্কের একটি আদালত রায় দিয়েছেন: লেখিকা ই জিন ক্যারলের ওপর ট্রাম্প যৌন নিপীড়ন চালিয়েছেন। তবে এ সংক্রান্ত মামলায় ধর্ষণের অভিযোগ থেকে রেহাই পেয়েছেন তিনি।
রায়ে আরও বলা হয়েছে, নব্বইয়ের দশকে একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে যৌন নিপীড়ন ও হেনস্তার ঘটনার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওই লেখিকা প্রায় ৫০ লাখ ডলার পাবেন। যদিও ট্রাম্পের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে ট্রাম্প আপিল করবেন। সে ক্ষেত্রে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে ক্ষতিপূরণের অর্থ দিতে হবে না।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা থাকলেও কিংবা জেল হলেও তিনি (ডোনাল্ড ট্রাম্প) নির্বাচনী প্রচারাভিযান চালিয়ে যেতে পারবেন।
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের করা একটি মানহানির মামলায় হেরে গেছেন সাবেক পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস। গত এপ্রিলে দেয়া মামলার রায়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনজীবীর খরচ বাবদ ১ লাখ ২২ হাজার ডলার দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি আপিল আদালত।
২০২২ সালের মার্চে এ দেওয়ানি মামলার খরচ হিসেবে ট্রাম্পকে প্রায় তিন লাখ ডলার দিতে ড্যানিয়েলসকে আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন ড্যানিয়েলস। সেই আপিলের রায়ে পর্ন তারকা হারলেও কমেছে জরিমানার পরিমাণ।
প্রতিবেদনে জানা যায়, ‘ট্রাম্পের কাছ থেকে সরে দাঁড়াতে’ তাকে ও তার সন্তানকে হুমকি দিচ্ছেন এক ব্যক্তি; ড্যানিয়েলস এমন একটি মিথ্যা ঘটনা তৈরি করে ফাঁদ পেতেছেন বলে অভিযোগ করলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন ড্যানিয়েলস। কিন্তু প্রমাণের অভাবে মামলাটি খারিজ হয়ে য়ায়।
এছাড়া আর্থিক অনিয়মের জন্য ট্রাম্প এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিক ৩৪ দফা অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। গত নির্বাচনের ফলাফল বদলানোর চেষ্টা, ৬ জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলে হামলা ও হোয়াইট হাউস থেকে সরকারি নথি হাতানোর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা ঝুলছে।
এ তিন মামলাকে ট্রাম্প হয়তো ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে নিজের সমর্থকদের বুঝ দিতে পারবেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে এসব গুরুতর অভিযোগ সত্ত্বেও নিজ সমর্থকদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা বিন্দুমাত্র কমেনি; বরং আরও বেড়েছে। বিশেষ করে এপ্রিল মাসে ব্যবসায়ের তথ্য জালিয়াতির দায়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর থেকেই তার জনপ্রিয়তা বেড়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত সিএনএনের এক জরিপে দেখা গেছে, প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ৫৩ শতাংশ রিপাবলিকান সমর্থকের প্রথম পছন্দ ট্রাম্প। বিপরীতে ডিস্যান্টিসের সমর্থক মাত্র ২৬ শতাংশ। আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থিতার দৌড়ে তিনি আরও এগিয়ে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডিস্যান্টিসের প্রার্থিতা ঘোষণা
২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার তার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন একসময় তার সহকর্মী ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস।
গত বুধবার (২৪ মে) বিকেলে রন ডিস্যান্টিস মার্কিন ফেডারেল নির্বাচন কমিশনে নিজের প্রার্থিতার বিষয়ে আবেদন করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। এর আগে, তিনি সেদিনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে নিজের প্রার্থিতার বিষয়টির জানান দেন।
ফ্লোরিডার গভর্নর ও রিপাবলিকান পার্টির এই নেতা এখন প্রাথমিকভাবে তার দলের আরেক প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন। শেষ পর্যন্ত রিপাবলিকান ভোটাররা যাকে নির্বাচিত করবেন, তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর সঙ্গে লড়বেন।
ডিস্যান্টিসকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী বলে ভাবা হয়। যদিও রিপাবলিকান পার্টি থেকে এ পর্যন্ত যারা প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার জন্য দৌড়ে নামার ঘোষণা দিয়েছেন, তাদের মধ্যে ট্রাম্পই এখনও পর্যন্ত জনমত জরিপে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে সামনের বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রিপাবলিকান পার্টি তাদের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে।
ট্রাম্পের জন্য কতটা চ্যালেঞ্জ হতে পারেন ডিস্যান্টিস?
রন ডিস্যান্টিস ফ্লোরিডার গভর্নর হিসেবে রাজ্যের মানুষের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অধিকার বাড়িয়েছেন, স্কুলে যৌন এবং লিঙ্গ পরিচয় বিষয়ক পাঠ্যক্রম সীমিত করেছেন, গর্ভপাতের অধিকার সীমাবদ্ধ করেছেন, ভোটদানের নিয়ম-কানুনে অনেক কড়াকড়ি করেছেন।
একই সঙ্গে বড় বড় কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে যে তিনি পিছপা নন, সেটাও দেখানোর চেষ্টা করেছেন ডিজনির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে। যেখানে প্রথাগত রিপাবলিকানরা বরং ব্যবসা-বান্ধব নীতির পক্ষপাতী। তবে ডিস্যান্টিস ডিজনির সঙ্গে এ আইনি বিবাদে জড়িয়েছেন মূলত যৌন এবং লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে আমেরিকায় চলমান বিতর্কে কট্টর রক্ষণশীল দক্ষিণপন্থিদের অবস্থান থেকে।
ফ্লোরিডার গভর্নর হিসেবে ডিস্যান্টিস স্কুলে যৌনতা এবং লিঙ্গ পরিচয় বিষয়ে শিক্ষকরা কী পড়াতে পারবেন এবং কী পারবেন না, তা সীমিত করে দিয়েছিলেন। ডিজনির সমালোচনা করেছিল, কারণ ডিজনির কর্মীরাই এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
ডিস্যান্টিস দেখাতে চাইছেন, তিনি সবসময় নির্বাচনে জেতেন, কংগ্রেস বা গভর্নর পদের নির্বাচনে তাকে কেউ হারাতে পারেনি। তবে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পেতে হলে তাকে ট্রাম্প সমর্থক ভোটারদের মন জয় করতে হবে, তাদের বোঝাতে হবে যে, ‘ট্রাম্প-ইজমের’ আদি সংস্করণের চেয়ে তিনি যে ধারার রাজনীতি নিয়ে আসছেন, সেটি অনেক ভালো। তবে এক্ষেত্রে রন ডিস্যান্টিসকে বেশ ভেবেচিন্তে পা ফেলতে হবে, কারণ আরও অনেক প্রার্থী এই একই চেষ্টা করবেন। সব মিলিয়ে ডিস্যান্টিসকে একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হচ্ছে।
গত বছরের নির্বাচনী জরিপেই দেখা যাচ্ছিল, ডিস্যান্টিস এবং ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলবে, কখনও কখনও তিনি জরিপে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু এখন ট্রাম্প কোনো কোনো জরিপে ৫০ শতাংশেরও বেশি এগিয়ে আছেন। ডিস্যান্টিস যদি ট্রাম্পকে সমর্থন করে না এমন সব ভোটারকে একজোটও করতে পারেন, তারপরও কিন্তু তিনি জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে পিছিয়ে থাকবেন।
জরিপের হিসেবে অনেক ওঠানামাও হতে পারে। এখনও এমন সম্ভাবনা আছে যে, পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে থাকা মামলায় নানা আইনি জটিলতায় হোঁচট খেয়ে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকেও পড়তে পারেন। যদিও রিপাবলিকান সমর্থকদের মধ্যে এখন পর্যন্ত এর প্রভাব একেবারে বিপরীত।