দক্ষিণ ভারত প্রায় গেরুয়া মুক্ত। কর্ণাটক বিধানসভায় কংগ্রেসের কাছে হেরেছে মোদির দল বিজেপি। আর এটাকে পুঁজি করে মোদী বিরোধিতায় সরব হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। বিশেষ করে, কর্ণাটকের ফল সামনে রেখে আগামী পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটের প্রচারে দৌড়াচ্ছেন মমতা এবং তার দল তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও কংগ্রেস বলছে, বিজেপিবিরোধী একমাত্র শক্তি কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে মমতার উদ্যোগ সফল হবে না।
কর্ণাটক বিধানসভায় অপ্রত্যাশিতভাবে ভালো ফল শুধু নয়, কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি সরকারকে প্রায় সমূলে ভোটের মধ্য দিয়ে উপড়ে ফেলেছে সোনিয়া-রাহুলের দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। অনেকে বলছেন, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলা করে সাংসদ পদ খারিজ করার ফল পেতে হয়েছে মোদীর দল বিজেপিকে। আবার অনেকের ধারণা, ‘ভারত জোড়ো যাত্রার’ সুফল পেতে শুরু করেছে কংগ্রেস।
হিমাচল প্রদেশের পর কর্ণাটকে কংগ্রেসের জয় রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বকেই আরও সমৃদ্ধ করছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ঠিক এই বাস্তবতায় ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে মোদিবিরোধী জোটের মুখ হিসেবে মমতার দল রাহুল গান্ধীকে দেখতে নারাজ। আর তাই কর্ণাটকে বিজেপির হারের পরও তৃণমূল নেতৃত্ব কংগ্রেসকে খুব বেশি কৃতিত্ব দিতে নারাজ মমতা। বিজেপির হারকেই শুধু সামনে এনে আগামী নির্বাচনে তৃণমূল এককভাবে প্রচারের আগুনে ঘি ঢালতে চাইছে। তাই কর্ণাটকের ফলের পরই বিজেপিকে ঝাঁঝালো আক্রমণ তৃণমূলের।
মমতা কংগ্রেসকে সমর্থনের পাশাপাশি দলটির ‘নীতি’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বলেছেন, ‘যেখানে কংগ্রেস শক্তিশালী, সেখানে ওদের সমর্থন করব। কোনো সমস্যা নেই। তবে ওদেরও অন্য দলকে সমর্থন করা উচিত।’ এরপরই কর্ণাটকে কংগ্রেসের জয় এবং বিজেপির ভরাডুবি নিয়ে সরব হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, ‘আমরা কর্ণাটকে আপনাদের (কংগ্রেস) সমর্থন করব। অথচ আপনারা রোজ এখানে (পশ্চিমবঙ্গ) আমাদের সঙ্গে লড়াই করবেন, এটা তো ঠিক নীতি নয়।’
কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে মমতার সুসম্পর্কের কথা সর্বজনবিদিত। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেসের সঙ্গে মমতা এবং তৃণমূলের ‘অম্ল মধুর’ সম্পর্কের কথা রাজ্য রাজনীতিতে সকলেরই জানা। এই আবহে কংগ্রেসকে সমর্থনের কথা জানিয়েও সে দলের নীতি নিয়ে যে কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী, তা এ পর্বে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের উদ্দেশে তিনি আরও বলেছেন, ‘ভাল কিছু জিনিস পেতে গেলে, নিজের ক্ষেত্রে কিছুটা ত্যাগ করতে হয়।’
যদিও মমতার এই কৌশলকে গুরুত্ব দিতে চান না কংগ্রেস নেতারা। তেমনই বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেস-তৃণমূল-বাম ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়লেও খুব একটা সুফল লোকসভা ভোটে পাওয়া যাবে না বলে দাবি বিজেপি নেতৃত্বের।
আগামী বছর ভারতে জাতীয় নির্বাচন। এর আগে মোদী বিরোধী ধর্ম নিরপেক্ষ মহাজোট নিয়ে দেশজুড়ে একটি আন্দোলন তৈরির চেষ্টা চলছে। তবে এখনো বড় প্রশ্ন বিজেপির মুখ মোদীর সামনে বিরোধীদের মুখ কে? রাহুল গান্ধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
এই সিদ্ধান্ত যখন চূড়ান্ত হবে, তখনই মোদীর বিরুদ্ধে জোড় লড়াই করা সম্ভব বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।