বাংলাদেশ উপকূল স্পর্শ করেছে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা। এরই মধ্যে ঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বরিশাল অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আবহাওয়া দফতর বলছে, মোখা কক্সবাজার এলাকা অতিক্রম করবে রোববার (১৪ মে) দুপুর ১২টা থেকে ৩টার মধ্যে। আর এই সময়টাই সেন্টমার্টিন ও টেকনাফের জন্য ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।
সকালে আবহাওয়া দফতরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান সময় সংবাদকে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন ও টেকনাফের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর সময় হলো দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা। এ সময়ের মধ্যে স্থলভাগ অতিক্রম শুরু করবে মোখা। এর প্রভাবে সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ অঞ্চলের নিম্নাঞ্চল ১২ ফুটের বেশি জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
এ সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২১৫ কিলোমিটারের বেশি হতে পারে জানিয়ে এ আবহাওয়াবিদ আরও বলেন, তখন প্রচণ্ড বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাবে; উপকূল প্লাবিত হবে।
এদিকে, সকালের বুলেটিনে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১২ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
এছাড়া ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং এগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল ৭ ফুটের বেশি জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
তবে ঘূর্ণিঝড় মোখা সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়নি আবহাওয়া দফতরের এ পূর্বাভাস সঠিক হয়েছে দাবি করে আবহাওয়াবিদ মো. আজিজুর রহমান আরও বলেন, ‘মোখার সুপার সাইক্লোন হয়ে উঠার আর শঙ্কা নেই। আমরা বুলেটিনগুলো সঠিকভাবে দিতে পেরেছি; আর আমাদের পূর্বাভাসও সঠিক হয়েছে।’
এদিকে, ভোর ৬টায় মোখা চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল।
এটি উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর এবং ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় (১৮.৮° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১.৩° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ।
আবহাওয়া দফতর কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে।
এছাড়া, উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং তার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং এগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলার নদী বন্দরসমূহকে ৪ নম্বর নৌ-মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে, ঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারি (৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতিভারি (৮৯ মিমি) বর্ষণ হতে পারে। ভারি বর্ষণে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।