পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গ্রেফতার ইস্যুতে সর্বোচ্চ আদালতের অবস্থান বিপাকে ফেলেছে শাহবাজ সরকারকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, গ্রেফতারের কারণে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা উল্টো আগের চেয়ে বেড়েছে।
ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ, বর্তমান শাহবাজ সরকারের টিকে থাকার পেছনে সেনাবাহিনীর সমর্থন, দেশ পরিচালনায় শাহবাজ সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সরব ছিলেন পিটিআই চেয়ারম্যান মরান খান।
তাকে সামলাতে একের পর এক মামলা ও একাধিকবার গ্রেফতারের চেষ্টার পরও ধরাছোঁয়ার বাইরেই ছিলেন ইমরান খান। ফলে সরকারের পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ার জন্য পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কাছে একমাত্র উপায় ছিল পিটিআই চেয়ারম্যানকে আটক করে নির্বাচনের বাইরে রাখা। তবে গ্রেফতারের পর ইমরান খানের জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে গেছে।
গত মঙ্গলবার (৯ মে) ইমরান খান গ্রেফতার হওয়ার পর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। ক্ষোভে ফুঁসতে থাকা পিটিআই সমর্থকদের বিক্ষোভকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে আখ্যা দেন তিনি। একইসঙ্গে ইমরান খান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শত্রুতায় নেমেছেন বলে মন্তব্য করেন। সন্ত্রাসী এবং রাষ্ট্রের শত্রুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।
ইমরান খানের গ্রেফতার ইস্যুতে সরব ছিলেন পাকিস্তান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিও। সরকারে থাকাকালীন ইমরান খান ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, পিটিআই চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। যেসব অভিযোগে ইমরানকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেগুলোকে ‘গুরুতর’ হিসেবেও আখ্যা দেন বিলাওয়াল ভুট্টো।
ইমরান খানকে গ্রেফতার ইস্যুতে যখন টালমাটাল পাকিস্তান, তখনই দৃশ্যপটে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। ইসলামাবাদ হাইকোর্ট বৈধ বললেও পিটিআইপ্রধানকে গ্রেফতার বেআইনি বলছেন সর্বোচ্চ আদালত।
এই রায়ে স্পষ্ট হলো-পাকিস্তান সরকার ও সুপ্রিম কোর্টের মতবিরোধ। ইমরান সমর্থকরা বিজয় উৎসব করলেও প্রকাশ্যেই সর্বোচ্চ আদালতের সমালোচনা করছেন ক্ষমতাসীনদের অনেকেই। মনে করা হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে পাক সরকারের কর্তৃত্ব, চাপে ফেলবে দেশটির সামরিক বাহিনীকেও।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো ইমরান খানের গ্রেফতারের পক্ষে সাফাই গাইলেও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কণ্ঠেও ভিন্ন সুর। আদালত চত্বর থেকে অপহরণের কায়দায় ইমরান খানকে আটকের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।
পিটিআই চেয়ারম্যান আটক থাকা অবস্থায় তার সঙ্গে পুলিশ লাইনসের রেস্ট হাউসে বৃহস্পতিবার (১১ মে) রাতে দীর্ঘ দুই ঘণ্টার বৈঠক করেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট।
এ মুহূর্তে দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতায় পরিণত হয়েছেন ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ইমরান খান। বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তান সরকারের শীর্ষ অনেক নেতাই মনে করছেন আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিলে জয়ী হয়ে আবারও ক্ষমতায় আসবেন ইমরান খান। ফলে তার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখার তোড়জোড় শুরু করেছেন কেউ কেউ। প্রেসিডেন্ট আলভিও হয়তো এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী শাহবাজের উল্টোদিকে হাঁটছেন বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।
পাকিস্তানে কয়েক দশক ধরে চলা উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যেও জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছেন ইমরান খান। গত বছর অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হলেও দমে যাননি তিনি। এরপর থেকে ক্রমেই রাজনৈতিক আন্দোলন জোরদার করেছেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের এ নেতা। ইমরান খানের জনপ্রিয়তার ভয়েই গ্রেফতারের মাধ্যমে তাকে মোকাবিলা করাকে একমাত্র পথ হিসেবে বেছে নিয়ে নিজেদের পায়েই যেন কুড়াল মেরেছে শাহবাজ সরকার।