আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হলেও এর পেছনে অন্য কারণ রয়েছে বলে মনে করেন দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সেনাকর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঢালাও মন্তব্য কারণেই সেনা মদদে ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।
১৯৯২ সালে পাকিস্তানকে ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক ইমরান খান ২০১৮ সালে খেলার দুনিয়ার নায়ক থেকে হয়ে যান রাজনৈতিক জগতের নায়ক। দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে হন প্রধানমন্ত্রী। তবে সেই ক্ষমতা বেশিদিন স্থায়িত্ব পায়নি। গত বছরের এপ্রিল মাসে পার্লামেন্টের অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান।
ইমরান খান ক্ষমতা ছাড়ার পর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেই ক্ষোভ প্রকাশ শুরু করেন। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে তার বাজে সম্পর্কের বিষয়টিও সামনে আসে। ঐ সময় বলা হয়, সেনাবাহিনীর সঙ্গে মতবিরোধের কারণেই ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে তাকে।
ইমরান খানের গ্রেফতারের পর আবার দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরোধের বিষয়টি সামনে এসেছে। দেশটির রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, আল কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলেও এই ঘটনার মূলে রয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। কেননা কয়েকদিন আগে শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেন ইমরান খান।
এছাড়া, পাকিস্তানের প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ করেছিলেন ইমরান খান। পরে তার ঐ অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে প্রত্যাখ্যান করে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী গণসংযোগ পরিদফতর আইএসপিআর।
এর আগে, গত বছরে নভেম্বরে লংমার্চের সময় হামলার ঘটনায় সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধের হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছিলেন ইমরান খান। মূলত ঐ ঘটনার পর থেকেই নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের পাশাপাশি সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে বিভিন্ন সময় ঢালাও মন্তব্য করেন ইমরান। আর এসব কারণেই তাকে গ্রেফতার করা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করেছেন দেশটির রাজনীতিবিদরা।
তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে দেয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ইমতিয়াজ গুলের মতে মূলত দুটি কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে ইমরান খানকে। একটি হলো তাকে একটি উচিত শিক্ষা দেয়া এবং অপরটি সেনা এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে অনবরত বিষোদগার করা।
ইমতিয়াজ গুল বলেন, ‘অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পর থেকেই তাকে একটি উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য একটি প্লট প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিল। এবং এ কারণেই তার বিরুদ্ধে ১৫৫টির মতো মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে ধর্ম অবমাননা মামলাও রয়েছে।’
ইমরান খানের গ্রেফতারের পেছনে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর হাত রয়েছে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে ইমতিয়াজ গুল বলেন, ‘আমি বরং অবাকই হবো যদি সামরিক বাহিনীর হাত না থাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি এসবের পেছনে সামরিক বাহিনীর হাত না থাকতো হবে ইমরান খানকে এই পরিণতি বরণ করতে হতো না। তার বিরুদ্ধে ১৫৫টি মামলাও থাকত না।’
এদিকে সেনা অভ্যুত্থান ঘটাতে দেশকে অস্থিতিশীল করতেও ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হতে পারে বলেও মত কোনো কোনো বিশ্লেষকের। এ ছাড়া, অর্থনৈতিকভাবে তীব্র সংকটে থাকা পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নিতেও এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হতে পারে বলে ধারণা করছেন কেউ কেউ।