চীনের প্রভাব মোকাবিলায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও ভারতের মধ্যে একটি দীর্ঘ রেল সংযোগ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনাও শুরু করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভারত – এ তিনটি দেশই এশিয়া অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ও অংশীদার। গত শুক্রবার (০৫ মে) মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস জানায়, একটি দীর্ঘ রেল সংযোগ গড়ে তুলতে দেশগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রতিবেদন মতে, মধ্যপ্রাচ্যে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতে এ অঞ্চলে ওয়াশিংটনের প্রকল্পগুলোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হতে যাচ্ছে বিশাল এ রেলওয়ে নেটওয়ার্ক। দুদিন পরই সৌদি সফরে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জেক সুলিভান।
গত রোববার (০৭ মে) রিয়াদে সৌদি প্রধানমন্ত্রী ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা শেখ তাহনুন বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
অ্যারাবিয়ান এক্সেপ্রেসের এক প্রতিবেদন মতে, হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রিয়াদ বৈঠকে কর্মকর্তারা ভারত ও বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত একটা অধিকতর নিরাপদ ও সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য গড়ে তোলার অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে করণীয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
দুটি অজ্ঞাত সূত্রের বরাতে এক্সিওস জানিয়েছে, বিশাল এ যৌথ প্রকল্পটি রেলওয়ে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আরব দেশগুলোকে সংযুক্ত করবে, যা অত্র অঞ্চলের বন্দরগুলোর সঙ্গে শিপিং লেনের মাধ্যমে ভারতের সাথেও সংযুক্ত হবে।
প্রতিবেদন মতে, নতুন এ উদ্যোগের ধারণাটি গত ১৮ মাস ধরে ‘আইটুইউটু’ নামক আরেকটি ফোরামে আলোচনার সময় উদ্ভূত হয়। এ ফোরামে প্রথমে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভারত। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন পরে সৌদি আরবকেও অন্তর্ভুক্ত করে।
ভারত মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক অংশীদারদের মধ্যে অন্যতম। সৌদি ও আমিরাতে কর্মরত শ্রমিকদেরও একটি বড় অংশ ভারতীয়। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি ও গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ও শহরগুলোর সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপন করা হলে মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃস্থানীয় দুই দেশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পের মাধ্যমে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর যে পদক্ষেপ নিয়েছে চীন—তার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে নতুন রেল প্রকল্পকে সামনে এনেছে যুক্তরাষ্ট্র।
কয়েক বছর আগে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) নামে মহাপ্রকল্পের কাজ শুরু হয়। কাজ শেষ হলে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া এবং পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে চীনের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এর ফলে এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বেইজিংয়ের প্রভাব আরও দৃঢ় হবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অস্বস্তির কারণ হবে।