বলিভিয়ার জেনারেল গ্যারি প্রাডো সালমন মারা গেছেন। কিউবার বিপ্লবী আর্নেস্তো ‘চে’ গুয়েভারাকে বন্দি করে জাতীয় বীরে পরিণত হয়েছিলেন এ জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা।
সোমবার (৮ মে) এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, কিউবার বিপ্লবী আর্নেস্তো ‘চে’ গুয়েভারাকে বন্দি করে জাতীয় বীরে পরিণত হওয়া জেনারেল গ্যারি প্রাডো সালমন ৮৪ বছর বয়সে মারা গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টদের সহায়তায় ১৯৬৭ সালে প্রাডো সালমন বলিভিয়ায় এক সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আর ওই অভিযানেই চে গুয়েভারার সংগঠিত কমিউনিস্টবলিভিয়া বিদ্রোহকে পরাজিত করা হয়েছিল।
তখন বলিভিয়ায় ডানপন্থি সামরিক সরকার ক্ষমতায় ছিল। আর তাই আর্জেন্টিনা বংশোদ্ভূত গুয়েভারাকে গ্রেফতারের একদিন পরই একজন সেনা কর্মকর্তা তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন।
মূলত ষাটের দশকের সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শীতল যুদ্ধ সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠেছিল এবং চে গুয়েভারার কার্যকলাপসহ লাতিন আমেরিকায় কমিউনিস্ট প্রভাব নিয়ে সেসময় অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিল ওয়াশিংটন।
১৯৫৯ সালের বিপ্লবের বিজয়ের পর কিউবা ত্যাগ করেছিলেন চে গুয়েভারা। মূলত অন্যান্য দেশে গেরিলা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। গুয়েভারা কিউবার কমিউনিস্ট নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর প্রধান সহযোগী ছিলেন এবং বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্টদের জন্য তিনি পরবর্তী সময়ে নায়ক হয়ে ওঠেন।
এদিকে জেনারেল প্রাডোর ছেলে তার বাবাকে ‘একজন অসাধারণ ব্যক্তি’ হিসাবে অভিহিত করেছেন। তিনি ‘প্রেম, সততা এবং সাহসের উত্তরাধিকার’ রেখে গেছেন বলেও জানান তিনি। এছাড়া চে গুয়েভারাকে গুলি করে হত্যা করা মারিও টেরান নামের সেই বলিভিয়ান অফিসারও গত বছর মারা যান।
গুয়েভারার গেরিলা গোষ্ঠীকে পরাজিত করার মাধ্যমে বলিভিয়ার সামরিক শাসনকে রক্ষা করার জন্য জেনারেল প্রাডোকে জাতীয় নায়ক বানানো হয়েছিল। অভিযানের সময় তিনি প্রত্যন্ত জঙ্গল অঞ্চলে মার্কিন-প্রশিক্ষিত বলিভিয়ান রেঞ্জার্সের নেতৃত্ব দেন। অভিযানের আগে চে গুয়েভারার গ্রুপে সদস্য সংখ্যা প্রায় ১২০ থাকলেও পরে তা হ্রাস পেয়ে মাত্র ২২ জনে নেমে আসে।
অবশ্য একটি বুলেট দুর্ঘটনাক্রমে মেরুদণ্ডে আঘাত করার পর ১৯৮১ সাল থেকে জেনারেল প্রাডো হুইলচেয়ার ব্যবহার করতেন। নিজের ১৯৬৭ সালের বিজয় সম্পর্কে একটি বই লিখেছিলেন এই সেনা কর্মকর্তা, যার নাম হাউ আই ক্যাপচারড চে।
তার ছেলের মতে, ‘তার কাছে চেকে বন্দি করা তার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল না-বরং, সশস্ত্র বাহিনীকে একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে অবদান রাখাই ছিল তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ যা সংবিধান ও আইনকে সম্মান করবে’।