লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অপ্রতিরোধ্য রিয়াল মাদ্রিদের জন্য কোপা দেল রে ভাগ্যটা খুব একটা প্রসন্ন নয়। এ প্রতিযোগিতায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে রিয়াল। নয় বছর পর ফাইনালে উঠা তাদের ভাগ্য বদলালো দুই ব্রাজিলিয়ানের যুগলবন্দিতে। ভিনিসিউস জুনিয়র বল বানালেন, গোল করলেন রদ্রিগো। তাতেই নিশ্চিত হলো রিয়ালের ২০তম কোপা দেল রে’র শিরোপা।
শনিবার (৬ মে) দিবাগত রাতে কোপা দেল রে’র ফাইনালে ওসাসুনাকে ২-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচে জোড়া গোল করেছেন রদ্রিগো। ওসাসুনার পক্ষে একমাত্র গোলটি লুকাস তোরের।
স্তাদিও লা কারতুজা স্টেডিয়ামে শুরু থেকেই আক্রমণে যান রিয়াল। মাঠে আসা দর্শকরা ঠিকমতো গুছিয়ে বসতে না বসতেই গোল করে বসেন রদ্রিগো। বাঁ প্রান্ত দিয়ে ঝড়ের গতিতে ওসাসুনার বক্সে ঢুকে পড়েন ভিনিসিউস। প্রতিপক্ষের দুই-তিনজনকে ড্রিবল করে বল গোলমুখে মাইনাস করেন ভিনি। দূরের পোস্টে অরক্ষিত অবস্থায় অপেক্ষা করছিলেন রদ্রিগো। গোলরক্ষক হেরেরার মাথার ওপর দিয়ে বল জালে জড়ান তিনি।
অষ্টম মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় ওসাসুনা। মাদ্রিদের অর্ধে ফাঁকা জায়গা পেয়ে অনেকটা দৌড়ে দারুণ ক্রস করেছিলেন পেনা। সেই ক্রসে বুদিমিরের হেড সহজেই ধরে ফেলেন কোর্তোয়া। ১৫ মিনিটে ফের সুযোগ পেয়েছিল ওসাসুনা। ফ্রি কিক থেকে পাওয়া বলে দারুণ ক্রস করেছিলেন মঙ্কায়োলা। ভিড়ের মধ্যে হেড নিয়েছিলেন গোমেজ; কিন্তু অল্পের জন্য পোস্ট ঘেঁষে চলে যায়।
২৫ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর দারুণ সুযোগ পেয়েছিল রিয়াল। দারুণ খেলতে থাকা ভিনিসিউস মঙ্কায়োলাকে কাটিয়ে ভয়ঙ্কর ক্রস বাড়িয়েছিলেন। বল পেয়ে রদ্রিগো গোলে শট না নিয়ে ফ্লিক করে বাড়ান বেনজেমার উদ্দেশে। কিন্তু ততক্ষণে ওসাসুনার গোলরক্ষক বল নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। এর পরের মিনিটেই দারুণ এক আক্রমণ থেকে গোল পেয়েই গিয়েছিল ওসাসুনা। গোললাইন থেকে বল ফিরিয়ে রিয়ালকে বাঁচান কার্ভাহাল।
৩২ মিনিটে ফের হতাশ হয় রিয়াল। ডেভিড আলাবার নেয়া চমৎকার ফ্রি কিক ওসাসুনার গোলরক্ষককে ফাঁকি দিলেও পোস্টে লেগে বাইরে চলে যায়।
এদিন একের পর এক সুযোগ তৈরি করেছেন ভিনিসিউস। সতীর্থদের দিয়ে গোল করাতে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই গোলের চেষ্টা করেন এ ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার। শুয়েমিনির শুরু করা আক্রমণ থেকে বল পেয়ে কাট করে বক্সে ঢুকে পড়েন ভিনি এবং বাঁকানো শটে বল জালে জড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বল বার ঘেঁষে চলে যায়।
৩৭ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখেন ওসাসুনার ডেভিড গার্সিয়া। এর কিছুক্ষণ পর রিয়ালের এদার মিলিতাও ও ভিনিসিউসও কার্ড দেখেন। রেফারির সঙ্গে বারবার তর্কে জড়ানোয় ভিনিসিউস কার্ড দেখেন। ১-০ গোলের লিড ধরে রেখে বিরতিতে যায় রিয়াল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেশ এলোমেলো ফুটবল খেলতে থাকে রিয়াল। সেই সুযোগে রিয়ালের রক্ষণে চাপ বাড়াতে থাকে ওসাসুনা। তেমনই একটি আক্রমণ থেকে ৫৮ মিনিটে সমতায় ফেরে ওসাসুনা।
পেনা ইজ্জালজউলির উদ্দেশে ক্রস করলেও তা রিয়াল মাদ্রিদের দেয়ালে বাধা পেয়ে ফিরে আসে। ডি-বক্সের বাইরে বল পেয়ে লুকাস তোরে রকেট গতির শট নেন। তার শট ঝাঁপিয়ে পড়েও ঠেকাতে পারেননি কোর্তোয়া। অসাধারণ দৃষ্টিনন্দন গোলে সমতা ফেরায় ওসাসুনা।
খেলায় ফিরতে এ সময় শুয়েমিনিকে তুলে রুডিগারকে নামান রিয়ালের কোচ আনচেলত্তি। ওসাসুনাও বুদিমিরকে তুলে আভিলাকে নামায়। খেলোয়াড় বদলের পরের মিনিটেই ফের এগিয়ে যায় রিয়াল।
রিয়ালের দ্বিতীয় গোলটিকেও প্রথম গোলটির প্রায় জেরক্স কপি বলা চলে। বাঁ প্রান্ত থেকে দারুণ গতিতে মঙ্কায়োলাকে ছিটকে ফেলে বাইলাইনে চলে আসেন ভিনিসিউস। এরপর বল সীমানার বাইরে চলে যাওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে কাট ব্যাক করেন তিনি। গার্সিয়া ক্লিয়ারের চেষ্টা করলেও বল চলে চায় ক্রুসের পায়ে। যদিও ওসাসুনার অধিনায়ক বল ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হলে বল পেয়ে যান আনমার্কড রদ্রিগো। বল জালে ঠেলে দিয়ে উল্লাসে মাতেন তিনি।
এদিন মাঠে নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন বেনজেমা। রিয়ালের বেশ কিছু আক্রমণ তার পায়েই নষ্ট হয়েছে। ৭৭ মিনিটে ক্রুসের নেয়া কর্নারে অনেকটা লাফিয়ে হেড করেন আলাবা; কিন্তু বল বারের ওপর দিয়ে সীমানার বাইরে চলে যায়।
৮২ মিনিটে ক্রুসকে তুলে মদ্রিচকে ও ৮৯ মিনিটে ম্যাচে দুই গোল করা রদ্রিগোকে তুলে মার্কো অ্যাসেন্সিওকে নামান কোচ। এর পরের মিনিটেই হলুদ কার্ড দেখেন ভালভার্দে।
৯০ মিনিটে গোলের দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন ভিনিসিউস। ওসাসুনার অর্ধে কর্নার থেকে বল পেয়ে গোল অভিমুখে ছুটছিলেন ভিনিসিউস। তার সামনে বাধা বলতে ছিলেন শুধুই গোলরক্ষক। কিন্তু হঠাৎ করে নিঃস্বার্থ হওয়ার সাধ জাগে এ ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গারের। তাই বল পেছনে বেনজেমার উদ্দেশে ঠেলে দেন। কিন্তু জায়গামতো ছিলেন না এ ফরাসি স্ট্রাইকার। বল নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন ওসাসুনার গোলরক্ষক।
৯৪ মিনিটে ম্যাচে ফেরার শেষ সুযোগটা হারায় ওসাসুনা। ওরোজ মাঝমাঠে বল পেয়ে ফরোয়ার্ড চিমির উদ্দেশে বল বাড়ান। তিনি বল পেয়ে স্কয়ার পাস বাড়ান বক্সে থাকা বোর্হার উদ্দেশে। কিন্তু ততক্ষণে কার্ভাহাল এসে পেছন থেকে ট্যাকল করে বল ক্লিয়ার করেন।
২০১৪ সালের পর এটি রিয়ালের দ্বিতীয় ও সব মিলিয়ে ২০তম কোপা দেল রে’র শিরোপা। সেবারও কার্লো আনচেলত্তির অধীনেই শেষবারের মতো এ প্রতিযোগিতার শিরোপা জিতেছিল রিয়াল।