পেপ গার্দিওলার ছাত্রদের মধ্যে সেরা কে? – চোখ বন্ধ করেই উত্তরটা দেওয়া যায়। এ যাবতকালে যাদের কোচিং করিয়েছেন তাদের মধ্যে তো বটেই, গার্দিওলার দৃষ্টিতে ইতিহাসেরই সেরা ফুটবলার আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি লিওনেল মেসি। গার্দিওলার ভাষায়, ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে নিখুঁত ফুটবলার লিওনেল মেসি। তার সঙ্গে বাকিদের তুলনা তো বটেই, ধারেকাছেও কাউকে দেখেন না ম্যানচেস্টার সিটির এই কোচ। তবে নিজের এক শিষ্যের মাঝে মেসির একটা ক্ষমতা খুঁজে পেয়েছেন তিনি।
বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ, ম্যানচেস্টার সিটি -যেখানেই গেছেন সাফল্য পায়ের কাছে এসে লুটোপুটি খেয়েছে পেপ গার্দিওলার। সেই সঙ্গে আছে সময়ের সেরা ফুটবলারদের শিষ্য হিসেবে পাওয়ার গৌরব। চলতি মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটি দলে ভিড়িয়েছে সময়ের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার আর্লিং হল্যান্ডকে। বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে দারুণ সাফল্য পেলেও ইংলিশ ফুটবলের সঙ্গে কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন ২২ বছর বয়সী হলান্ড, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল যথেষ্টই। তবে পেপ গার্দিওলাকে গুরু হিসেবে পাওয়ার পর নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন এই নরওয়েজিয়ান।
চলতি মৌসুমে গোল করে একের পর একটা রেকর্ড ভেঙেই চলেছেন হলান্ড। প্রিমিয়ার লিগে ৩৪ গোল করে ছুঁয়েছেন এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। তার আগে অ্যান্ডি কোল ও অ্যালান শিয়েরারও এক লিগ মৌসুমে ৩৪ গোল করলেও সে সময় লিগ ছিল ৪২ ম্যাচের। ৩৮ ম্যাচের লিগে হলান্ড তাদের সমান গোল করতে খেলেছেন মাত্র ৩০টা ম্যাচ। আর সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে তার গোলের সংখ্যা ৫০টি। গোল সংখ্যাটা অবশ্য বাড়িয়ে নেওয়ার আরও সুযোগ পাচ্ছেন হলান্ড। লিগে বাকি আরও ছয় ম্যাচ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও পাচ্ছেন কমপক্ষে আরও দুই ম্যাচ। এফএ কাপের ম্যাচও বাকি এখনো। বুধবার (৩ মে) ওয়েস্ট ব্রোমের বিপক্ষে মাঠে নেমে লিগে গোলের রেকর্ডটা অবশ্য আজই একার করে নেওয়ার সুযোগ থাকেছে হলান্ডের।
একের পর এক রেকর্ড ভাঙায় অনেকেই হলান্ডকে তুলনা করছেন মেসির সঙ্গে। এতদিন যেখানে ঘোর আপত্তি ছিল গার্দিওলার। দুই শিষ্যর মধ্যে তুলনাটা অপছন্দ এই স্প্যানিশ কোচের। তবে তুলনাহীন মেসির সঙ্গে একটা জায়গায় এখন তুলনা করতে আপত্তি নেই গার্দিওলারও। দুই শিষ্যের মধ্যে একটা মিল খুঁজে পেয়েছেন তিনিও।
মেসির সঙ্গে হলান্ডের মিলের জায়গাটা দুজনের গোল করার ক্ষমতায়। ইংল্যান্ডের শীর্ষ বিভাগের ফুটবলে ৯২ বছর পর প্রথমবারের মতো কোনো ফুটবলার এক মৌসুমে ৫০ গোল করেছেন। এর আগে ১৯৩০-৩১ মৌসুমে অ্যাস্টন ভিলার কিংবদন্তি টম ওয়ারিং লিগে ৪৯ গোলসহ সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে করেছিলেন ৫০ গোল। প্রথম মৌসুমেই সিটর হয়ে ৫০ গোল করা হলান্ডের এই কীর্তি দারুণ বলে মনে করছেন গার্দিওলা, সেই সঙ্গে মনে করিয়ে দিচ্ছেন লিওনেল মেসির কথা, যিনি ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১০ মৌসুমের মধ্যে ছয়বারই করেছেন ৫০ এর চেয়ে বেশি গোল।
গার্দিওলা বলেন, ‘মেসির সঙ্গে কারও তুলনা হয় না, আর এটা আর্লিংকে সাহায্যও করবে না। তবে গোল ও গোল করার মানসিকতার দিক থেকে তুলনা হতে পারে। কিন্তু মেসি ১০ থেকে ১৫ মৌসুম ধরে এমনটা করছে। আর্লিংও গোলের দিক থেকে একইভাবে পারফর্ম করছে। প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই গোল করছে। তবে আমার দেখা সবচেয়ে নিখুঁত ফুটবলার মেসি। দৃষ্টিভঙ্গি, ড্রিবল, পাস দেওয়ার ক্ষমতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মনোভাব—এমন অনেক কঠিন বিষয় বিবেচনাতে।’
এই মৌসুমে গোলবন্যা বইয়ে দিলেও এখনো হলান্ডের উন্নতির জায়গা দেখছেন গার্দিওলা। মেসির মতো গোলক্ষুধা ধরে রাখতে তার যে আরও অনেক উন্নতি চাই, ‘সব সময়ই আমি হলান্ডকে বলি, সে যদি এখনকার মতো সামনে গোল করতে না পারে, মানুষ বলবে, ‘ওহ, হলান্ড ছন্দে নেই।’ হলান্ডের খেলায় এখনো উন্নতির জায়গা আছে। আমরা তা নিয়ে কথাও বলেছি। শুধু তার মুভমেন্টে ও বক্সে নয়, পুরো ম্যাচেই। আমার মনে হয়, তার মধ্যে আরও ভালো করার করার আকাঙ্ক্ষা আছে।’