সুদানের সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে অবিলম্বে সেখানে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। সুদান পরিস্থিতি নিয়ে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা-ওআইসির এক জরুরি সভায় বিবদমান সুদানের সশস্ত্র বাহিনী এবং সুদান র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)- এর প্রতি এ আহবান জানানো হয়েছে।
সৌদি আরবের সভাপতিত্বে সুদানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য ওআইসির নির্বাহী কমিটির এক জরুরি সভা বৃহস্পতিবার (৪ মে) সংস্থাটির জেদ্দাস্থ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত হয়। ওআইসির স্থায়ী প্রতিনিধি এবং সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী সভায় এ আহবান জানান। সভার শুরুতেই ওআইসি মহাসচিব হিসেন ব্রাহিম তাহা সুদান পরিস্থিতি সম্পর্কে তার বক্তব্য তুলে ধরেন।
এ সময় রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, সুদানের এ লড়াই শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য সুদানের জনগণের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষাকে ক্ষুণ্ণ করছে। সেখানে যুদ্ধের ফলে ব্যাপক মানুষের জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি এবং ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, যুদ্ধের ফলে ইতোমধ্যে সুদানে অনেক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে সেখানে ব্যাপক লুটপাট হচ্ছে; স্থানীয়রা ছাড়াও বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসী বাসিন্দারা যার শিকার হচ্ছেন। অনেক বাংলাদেশি তাদের সর্বস্ব হারিয়েছেন এই লুটপাটের শিকার হয়ে।
সুদান থেকে বাংলাদেশিসহ বিদেশি নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার জন্য সৌদি আরবের আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি। বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আরও কয়েকটি দেশও সেখান থেকে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। তিনি বিদেশিদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের সুযোগ সৃষ্টি ও মানবিক সাহায্যের নিরাপদ সুযোগ সৃষ্টির জন্য সুদানের সরকার ও বিবদমান দলগুলোর প্রতি আহবান জানান।
ওআইসির জরুরি সভায় রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, যুদ্ধের সময় সুদানে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং মিশন প্রধানের বাসভবনে হামলা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং কূটনৈতিক নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি সুদান সরকার এবং যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কূটনৈতিক মিশন এবং এর কর্মীদের নিরাপত্তা এবং সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান।
রাষ্ট্রদূত জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় দেশ এবং আমরা আশা করি যুদ্ধ বন্ধে ওআইসি, আফ্রিকান ইউনিয়ন, আরবলিগ এবং জাতিসংঘ একটি গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে। তারা সুদান সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য যুদ্ধরত সব পক্ষকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসবে, যা সুদানে অবিলম্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনবে।
ওআইসির এ সভায় সুদান, তুরস্ক, আরব আমিরাত, কুয়েত, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আলজেরিয়া, ইরাক, মিশর, পাকিস্তান, গাম্বিয়া, মৌরিতানিয়া, ক্যামেরুন, জিবুতি, চাদ, তিউনিসিয়া, ফিলিস্তিন, লিবিয়া, মরক্কো, লেবানন, জর্ডানসহ অন্যান্য দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। এ সময় সুদানে যুদ্ধ বন্ধ, শান্তি প্রক্রিয়া শুরু ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি যৌথ ঘোষনাপত্র গৃহীত হয়।